বহাল তবিয়তে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তা

24

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ১৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের কথা প্রকাশিত হয়। যা সিডিএতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অনেক আগেই দুর্নীতি দমন কমিশন’র (দুদক) মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়েরের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সিডিএ’র অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। পরে এক্সেও (সাবেক টুইটার) পোস্ট করেন তিনি। দুটি পোস্টেই তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির বিস্তর চিত্র তুলে ধরেন।
সায়ের তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ; কালুরঘাট সড়ক প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ এর চার্জশিটভুক্ত আসামি কাজী হাসান বিন শামস বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ও তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী-১। তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এখনও চলমান। তবুও তিনি শীর্ষ পদে বহাল। চউকের ১৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর দুর্নীতির মামলা চলার পরও তারা স্বপদে বহাল। অকল্পনীয় ব্যাপার! সায়েরের পোস্টে উল্লেখিত তালিকায় রয়েছেন সিডিএর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ কাজী হাসান বিন শামস, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-২ এ.এ.এম. হাবিবুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনজুর হাসান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ, অথরাইজড অফিসার-১ মোহাম্মদ হাসান, নির্বাহী প্রকৌশলী আ.হ.ম. মিছবাহ উদ্দিন, সহকারী অথরাইজড অফিসার মুহাম্মদ ইলিয়াছ আকতার, সহকারী প্রকৌশলী/সহকারী অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ ওসমান, সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হামিদুল হক, এস্টিমেটর রুপন কুমার চৌধুরী, এস্টিমেটর সৈয়দ গোলাম সরোয়ার এবং সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান আছে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ ৫৮ ধারায় সংরক্ষিত থাকলেও অধিকাংশের বিরুদ্ধে মামলা এখনো ‘চলমান’ অবস্থায় রয়েছে। তবুও তাদের বরখাস্ত করা হয়নি কিংবা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। মাত্র তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলেও পরে তা স্থগিত করা হয়।
সিডিএ চেয়ারম্যান নুরুল করিম বলেন, আমার কাছে মনে হয় রিপোর্টটি অথেনটিক নয়। দুর্নীতি হয়নি, এটা বলছি না। মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দেবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, একশ টাকার একটি প্রকল্পে ৫০-৬০ টাকা দুর্নীতি হতে পারে? দুর্নীতিরও তো একটি সীমা আছে। তদন্ত ছাড়া কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়।
তিনি জানান, বর্তমানে সিডিএতে কর্মকর্তা সংখ্যা ১০-১২ জন। তাদের সবাইকে বরখাস্ত করলে কাজ চালানো সম্ভব হবে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও সময় লাগবে অন্তত এক বছর। তাই মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুর্নীতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্তরা যদি স্বপদে বহাল থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সিডিএর ক্ষেত্রেও এখন তেমনটাই দেখা যাচ্ছে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা কীভাবে নীতিনির্ধারণী পদে থেকে প্রভাব খাটান? এমন প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে গত বুধবার অথরাইজড অফিসার-১ মোহাম্মদ হাসানকে সরিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখা-৬ এর এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়।