বহদ্দারহাটে ৯ কাউন্টার পুরো সড়কে যানজট

6

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় নয়টি বাস কাউন্টারের কারণে যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র। পুলিশ বক্সের দক্ষিণ পাশে কাপাসগোলা সড়কে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জট লাগছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ যাত্রী, চালকসহ সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েকদিন ধরে বহদ্দারহাট, বাদুরতলা এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার জয়নুল আবেদীন (অতিরিক্ত ডিআইজি) বলেন, মূল সড়কে গাড়ি পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিআরটিএ, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশনের অনুমতিবিহীন কাউন্টার স্থাপনের কারণে সিটি কর্পোরেশনের উচিত এসব ভেঙে দেয়া। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে মূল সড়কে রুট পারমিটবিহীন বা অবৈধ গাড়ি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।
জানা গেছে, যাত্রী উঠানামা, ইউটার্ন, মূল সড়কে বাস পার্কিংসহ নানা কারণে যানজটটি নিত্যদিনের চিত্র। নয়টি কাউন্টারের মধ্যে বিশেষ করে এবি ট্রাভেলস এবং শাহ আমানত সার্ভিসের যাত্রীদের টিকিট বিক্রি, উঠানামার কারণে পেছনে টেইল বেড়ে যানজট তৈরি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশ বক্সের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে সেতুর সাথে লাগোয়া একটি মার্কেটে রয়েছে সাতটি দোকান। যার প্রত্যেকটিই হচ্ছে টিকেট কাউন্টার। আবার সেখানে একটি দোকানে দুইটি কাউন্টারও আছে। যেখানে লক্ষীপুর, ভোলা, চরফ্যাশন, চেয়ারম্যানঘাটা, হবিগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার গাড়ি এখান থেকে ছাড়ে। এসব পরিবহনগুলোর মধ্যে এসআর ট্রাভেলস, বাঁধন পরিবহন, রব্বানী পরিবহন, যমুনা এক্সপ্রেস (প্রা:) লিমিটেড, সোহাগ-১, শ্যামলী সার্ভিস, নিউ ইসরাত এক্সপ্রেস। তবে এসব গাড়িগুলো ছাড়া হয় রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে।কিন্তু রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লিচু বাগান পর্যন্ত দুইটি বাস সার্ভিস চলাচল করে। তার মধ্যে রয়েছে এবি ট্রাভেলস এবং শাহ আমানত সার্ভিস।
চালক ও হেলপারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবি ট্রাভেলস এর মালিকের মধ্যে একজন রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ভাই খালেদ মাহমুদ। এছাড়া আলাউদ্দিন নামে একজন বর্তমানে গাড়িগুলো পরিচালনা করছেন। মন্ত্রীর দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে বহদ্দারহাটে কাউন্টার খুলে বসেন তারা। একইভাবে কাপ্তাই বাস মালিক সমিতির পরিবহন হচ্ছে শাহ আমানত সার্ভিস। তারাও এবি ট্রাভেলস সূত্র ধরে কাউন্টার খুলে বসেছেন।
এবি ট্রাভেলস বাসের চালক কল্যাণ দত্ত পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের এ রুটে ৩১টি বাস চলাচল করে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাসগুলো চলে। যাত্রী ভর্তি হয়ে গেলে আমরা বাস ছেড়ে দিই। আমাদের মূল কাউন্টার হচ্ছে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে। কিন্তু সেখানে যাত্রী না থাকাতে আমরা এখান থেকে যাত্রী ভর্তি করে নিই। প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বাসে যাত্রী পূর্ণ হয়ে যায়। যেটা বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে হয় না।
তবে ওই রুটের কাউন্টার ম্যানেজারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি টিকেট বিক্রিতে ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন জানান।
শাহ আমানতের চালক বাবুল দাশ বলেন, এ রুটে আমাদের ১০ থেকে ১২টি গাড়ি চলাচল করে। এগুলো সরাসরি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সুজন বিশ্বাস পরিচালনা করেন। টার্মিনাল কাউন্টারে যাত্রী হয় না বিধায় আমরা এখান থেকে যাত্রী তুলি। তবে এখান থেকে যাত্রী তোলা হলে একটু যানজট হয়, সেটা মানি। তারপরও যাত্রীদের সুবিধার জন্য আমাদের এখান থেকে যাত্রী উঠাতে হয়।
শাহ আমানতের কাউন্টার ম্যানেজার সেতু দাশ বলেন, আমরা পুলিশ যাতে হয়রানি না করে, সে জন্য আগে পুলিশকে টাকা দিতাম। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এসে গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলার কারণে পুলিশও বাধ্য হয়ে গাড়িকে মামলা এবং জব্দ করে। তাই কিছুদিন ধরে আর ট্রাফিক পুলিশকেও টাকা দিই না। প্রতিদিন আমাদের গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এভাবে হলে আমরা এখানে বেশিদিন থাকতে পারবো না।
চট্টগ্রাম থেকে ভোলায় চলাচল করা সোহাগ এক্সপ্রেসের কাউন্টার ম্যানেজার মো. মঞ্জুর বলেন, যাত্রী কাউন্টারে আসার পর আমাদের গাড়িগুলো আনা হয়। তারপর রাতে আমাদের দুইটা গাড়ি এখান থেকে ছেড়ে গন্তব্যে চলে যায়। তাই যানজট তৈরি হয় না।
চট্টগ্রাম থেকে হবিগঞ্জ চলাচল করা দিগন্ত এক্সপ্রেসের কাউন্টার ম্যানেজার হারুন হাওলাদার বলেন, এবি ট্রাভেলস এবং শাহ আমানত বাসের কারণে এখানে যত সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাদের কাউন্টার হচ্ছে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে। সেখানেই তাদের শেষ গন্তব্য। অর্থাৎ লিচু বাগান থেকে সরাসরি বাস টার্মিনাল। কিন্তু যাত্রী উঠানোর জন্য তারা এখানে এসে লাইন ধরে। যার ফলে যানজট তৈরি হয় এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। আমাদের যেসব বাস রয়েছে, সেগুলো দিনে চলে না। গত ২০ বছর ধরে সেগুলো রাতে যাত্রী নিয়ে সরাসরি বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। চট্টগ্রামে অবস্থানরত সেসব জেলার মানুষরা জানেন যে, এখান থেকে তাদের জেলার গাড়িগুলো ছাড়া হয়। এতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, যানজটের কারণে প্রতিদিন কর্মঘণ্টায় বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক চালক যানজটের অজুহাতে ১০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা দাবি করে। নিরূপায় হয়ে দিতে হয়।
বহদ্দারহাট থেকে আন্দরকিল্লার যাত্রী মারুফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, বহদ্দারহাট থেকে যদি সকাল বেলা টেম্পুতে উঠি, তবে আধাঘণ্টা চলে যায় বাদুরতলা পার হতে। বাসগুলো যাত্রী উঠানামা, পার্কিংয়ের কারণে রাস্তা সরু হয়ে যায়। ফলে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মত সাধারণ যাত্রীদের।
চান্দগাঁওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) তুহিন আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, যানজট নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও জব্দ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। প্রতিদিন রং পার্কিং, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরিসহ নানা অপরাধের কারণে পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।