বর্ষায় গলাপানিতে তলিয়ে যাবে নগরী : মেয়রের আশঙ্কা

36

আসন্ন বর্ষায় নগরী গলাপানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালে দেওয়া অস্থায়ী বাঁধ অপসারণের পক্ষে মত দিয়েছেন মেয়র। একইসাথে মশক নিধনে নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে খাল-নালায় আবদ্ধ জলাশয়কে অনিয়ন্ত্রিত মশার প্রজননের কারণ বলে দাবি করেছেন মেয়র। নগরবাসীর অসচেতনতার কারণে পরিষ্কারের পরও পলিথিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে নগরীর ‘লাইফলাইন’ খ্যাত কর্ণফুলীও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মেয়রের আশঙ্কা। এ ছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, কাট্টলি সমুদ্র পাড়ে ওশান পার্ক, স্মৃতিসৌধ ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং বেশ কয়েকটি আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কর্পোরেশনের আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনের কেবি আবদুস ছাত্তার মিলনায়তনে মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ পরবর্তী ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল করে। মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে সব জানি এ রকম আমি কখনো মনে করি না। কাজেই কর্পোরেশন পরিচালনা করতে যদি কোন ভুলত্রূটি হয়, আপনারা তা আমাকে ধরিয়ে দিবেন। আমি সংশোধন করে নিবো। এ ব্যাপারে নগরীর সর্বস্তরের জনসাধারণ, সুধীজন, সংবাদ মাধ্যমের সহায়তা কামনা করি। সভার শুরুতে নগরজুড়ে চসিক মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থিত সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট উপস্থাপন করা হয়। এরপর মেয়র সংক্ষিপ্তাকারে বক্তব্য রাখেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা মেয়রের কাছে নগরীর বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জানতে চান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের ১০০ দিনে ক্রাশ প্রোগ্রামে ওয়ার্ডভিত্তিক প্যাচওয়ার্ক আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওয়াসার সংযোগ লাইনের জন্য মেরামত করা রাস্তা আবার কাটা হচ্ছে। যেমন সদরঘাট স্ট্যান্ড রোড, মেরামতের পর লাইনের লিকেজের কারণে এই সড়ক ওয়াসা আবারো কাটলো। এতে বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়ক নষ্ট হয়েছে। দুর্নাম হয় কর্পোরেশনের। এলইডি লাইট স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল। ৩০টি রাস্তা ৭৬ কিলোমিটার অংশে ২ হাজার ৯৬০ পোলের সাহায্যে ৫ হাজার ১১টি এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। নগরীর সৌন্দর্য্যবর্ধনের ক্ষেত্রে রাস্তায় মিডিয়ান ও ফুটপাত রংকরণের ৭০ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে মেয়রের গাড়ি কেনার জন্য টেন্ডার হয়েছে। অর্থ সংকটে থাকা সিটি কর্পোরেশনের এমন বিলাসী সিদ্ধান্ত কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়রের ব্যবহৃত গাড়িটি ১ কোটি ১০ লাখ দিয়ে কিনেন। ১৪ বছরের ব্যবধানে মাত্র ২০ লাখ বাড়িয়ে গাড়ি কেনার টেন্ডার হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও হয়েছে। তবুও এখন গাড়ি কিনছি না। টেন্ডার হলেও গাড়ি কেনার এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমার উপর।
পোর্ট কানেক্টিং রোড নিয়ে মেয়র বলেন, আগের ঠিকাদাররা কাজ না করে পালিয়েছেন। তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে জরিমানা করা হয়েছে। বাকি কাজগুলো করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ওই রোডের কাজ শেষ হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় কমে গেলেও অন্যান্য ব্যয়ের পাশাপাশি গত ফেব্রæয়ারির ১৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত কর্পোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মোট ৩৩ জনকে ৬৭ লাখ ২৫ হাজার ১১০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কাজেই গত তিনমাস অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আনুতোষিকের কোন টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে যে অপপ্রচার হয়েছে তা কিছু ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে প্রচার করছে বলে জানান মেয়র।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দীন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর মো. শহীদুল আলম, মো. এসরারুল হক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চসিক সচিব খালেদ মাহামুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরীসহ চসিকের পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।