একটি সুন্দর, সুখময় ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মাত্র আটমাস আগে এ দেশের তরুণ-দামাল ছেলেরা আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে যে গণঅভ্যূত্থান রচনা করেছিল তা যেন একের পর একে ঘৃণ্য বর্বরতা ও ভয়াবহ নৈরাজ্যের কাছে হারিয়ে যেতে বসেছে। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, নারী নির্যাতন, ছুরি, ছিন্তাই, ডাকাতি ও খুন-খারাবিসহ নানা অপরাধ ঘটছে প্রতিনিয়ত। একেকটি অপরাধ এতটাই ভয়াবহ যে, জাহেলিয়া যুগের বর্বরতাকেও যেন হার মানায়। ধর্ষকের ঘৃণ্য লোলুপ দৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোমলমতি শিশু, নিজের পৌরষজাত কন্যা এবং সাধারণ নারী। কিন্তু এতসব অপরাধ যখন ঘটছে, তখন দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। উদ্বেগের বিষয়, ডেভিল হান্টের আলোচিত অপারেশনে কোন সন্ত্রাসী, খুনি, দস্যু, ছিন্তাইকারী ও ধর্ষক ধরা পড়ছে-এমন কোন খবর আমাদের কাছে নেই। বরং অপারেশন ডেভিল হান্টের জালে আটকা পড়ছে পতিত রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের (নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ) নেতা-কর্মীরাই ধরা পড়ছে।
তবে ৮ বছরের শিশু আছিয়াকে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠছে তা যেমন অনুধাবন করা জরুরি, তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। মামলাটি করেছেন শিশুটির মা। তিনি মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি, ভাশুরও জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান। চিকিৎসাধীন শিশুটির সঙ্গে ঢাকায় থাকায় শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা ৩টার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। তথ্য মতে, মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাদের আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। এছাড়া, ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়েছে। চারদিনেও জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির। কৃত্রিম উপায়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস এমনটিও জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, এই ঘটনা কতটা ভয়ংকর তা অনুধাবন করতে হবে। ধর্ষকের বিরুদ্ধে শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই নয়, বরং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একের পর এক নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও সহিংসতা সমাজকে কোথায় নিচ্ছে সেই ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ করার বিষয় যে, নির্যাতন, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে সরব হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারাদেশে কর্মসূচির মাধ্যমে নিপীড়কদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার দাবি তুলেছে নানা শ্রেণি-পেশার সংক্ষুব্ধ মানুষ। এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে আরও অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। ফলে, দোষীর শাস্তির নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। শিশু ধর্ষণের শিকার এই প্রথম নয়। নানা সময়ে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে যে অবক্ষয়ের চিত্র স্পষ্ট হয় সেটাও আমলে নিতে হবে। ধর্ষণ একটি অসামাজিক ও শাস্তিযোগ্য নিকৃষ্ট অপরাধ-যা সমাজে নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে হুমকিতে ফেলে দেয়। সবচেয়ে উদ্বেগ ও আতঙ্কের বিষয়, চট্টগ্রামে এক ঘৃণ্য বাবার বিরুদ্ধে নিজের পৌরষজাত কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। মাগুরার ঘটনাও একধরণের নিজের বোনের শ্বশুর মানে বাবাতুল্য নরপিশাচের কাছে শিশুকন্যার বিবস্ত্রধ্যান। একমাত্র বর্বর জাহেলিয়া যুগে এ জাতীয় ঘটনা দেখা যেত। অথচ আধুনিক সভ্যতার এ যুগে সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি মুসলিম দেশে এ জাতীয় বর্বরতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পবিত্র ইসলামে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। পাথর মেরে হত্যার মত বিধান রয়েছে। এ সময় আমাদের অনুধাবন করা জরুরি যে, কেন বারবার সমাজে এই ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। কেন নৈতিক স্খলন, অধঃপতনের চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দোষীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যদিও সরকারের টনক নড়েছে বলে আমরা প্রতিয়মান হই , কিন্তু অতীতের মত কিছুদিন পর এসব বাস্তবতা যেন হাওয়ায় উড়িয়ে না যায়, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে সরকারকে।