পূর্বদেশ ডেস্ক
দেশে ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদন্ডের যে বিধান রয়েছে তা ‘বাস্তবতার নিরিখে বাতিল করা সম্ভব নয়’ বলে জাতিসংঘকে জানানোর কথা বলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা সাংবাদিকদের বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটা নিয়ে উনি (টুর্ক) বেশি প্রশ্ন তুলেছেন। উনি বলেছিলেন যে, মৃত্যুদন্ড রহিত করার কোনো সুযোগ আছে নাকি। আমি বললাম এটা তো বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব না। কারণ আমাদের পেনাল প্রভিশন; আমাদের শত বছরের যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম, যেখানে মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। এখন আমরা হুট করে যে ফ্যাসিস্টদের হাতে হাজার-হাজার তরুণ নিহত হয়েছে, হঠাৎ করে তার বিচারকে সামনে রেখে মৃত্যুদন্ড বাতিল করার প্রশ্নই আসে না।
২০১৭ সালে পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে হত্যা, ধর্ষণ, গুপ্তচরবৃত্তি, বিশ্বাসঘাতকতা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিল হাই কোর্ট। খবর বিডিনিউজের।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্বের অনেক দেশ সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডকে সমর্থন না করলেও বেসামরিকদের অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে তা বড় ভূমিকা রাখে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, তারা (জাতিসংঘ) সারা পৃথিবীতেই মৃতুদন্ড রহিত করার কথা বলেন, তাদের একটা অপশনাল প্রটোকল আছে, ওই প্রটোকলের মূল কথাই হচ্ছে মৃত্যুদন্ড রদ করা। কিন্তু পৃথিবীতে অল্প দেশই মৃত্যুদন্ড রদ করেছে। ফলে এটা তারা তাদের কমিটমেন্ট থেকে বলবে। কিন্তু আমাদের যে জুডিসিয়াল কালচার বা ক্রিমিনাল জাস্টিস আছে- সেগুলোতো আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে। এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাংলাদেশের কোনো সরকারই এই অপশনাল প্রটোকলের পক্ষ রাষ্ট্র হয় নাই।
আইনগত যেকোনো বড় পরিবর্তন সমাজের আকাক্সক্ষার সঙ্গে মিল রেখে করতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, কাজেই আমরা বলেছি, যৌক্তিকভাবে এই প্রত্যাশা করার স্কোপ নাই।
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের যে আইনগত সংস্কার, সেটার সঙ্গে জাতিসংঘ ইনভলব আছে। আমাদের যদি কোনো ফরেনসিক বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট লাগে বা ক্যাপাসিটি বিল্ডিং লাগে, সেটা উনারা দেবেন বলেছেন। আমরা সুবিচার করব। আমরা প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা থেকে বিচার করছি না। আমরা অবিচার করব না।
অপরাধের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা, অভিযুক্তদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সাক্ষী আনার সুযোগ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক রাখার সুযোগ, অভিযুক্তদের বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ প্রভৃতি বিষয়ে ফলকার টুর্ক প্রশংসা করেছেন বলে জানিয়েছেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কথা বলেছেন হাই কমিশনার, সে বিষয়েও আমরা আমাদের প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছি। আমাদের সরকারের সংস্কারের যে কাজ, ট্রানজিশনাল ট্রান্সফরমেশনের কাজ, এই সরকারের প্রতি উনার সর্বাত্মক সমর্থনের কথা উনি জানিয়েছেন।
উনি দুটি প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন, একটা হচ্ছে বিচার বিভাগ স্বাধীন করা। সেটা আমরা বলেছি, আমরা অবশ্যই কমিটেড এই প্রসঙ্গে। আমাদের প্রধান বিচারপতি একটা পৃথক সচিবালয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। অবশ্যই, সেটা আমরা নীতিগতভাবে গ্রহণ করি। কিন্তু এটা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেটা আমরা আলাপ-আলোচনা করা ঠিক করব।