বন্যা মোকাবিলা ভারতের সঙ্গে ‘উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা’ চান ড. ইউনূস

3

বন্যার মত দুর্যোগ মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের একটি সহযোগিতার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি চান, জরুরি অবস্থায় এই সহযোগিতা কার্যকর হবে। বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের
এই সাক্ষাৎটি এমন সময় হয়েছে যখন দেশের উত্তর পূর্বে সিলেট অঞ্চল, পূর্বাঞ্চলে বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং দক্ষিণ পূর্বে খাগড়াছড়ি বন্যায় ডুবে আছে। বৃষ্টির পাশাপাশি উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পরিস্থিতি শোচনীয় অবস্থা তৈরি করেছে ফেনীতে, যে জেলায় কখনো এমন বন্যার ইতিহাস নেই।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, ভারতীয় দূতকে ড. ইউনূস পানির তথ্য বিনিময় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতার কথা বলেছেন। স্যার বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায়ই, বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। স্যার বলেছেন, এমন কোনো সহযোগিতা করা যায় কি না যে, আমরা আর ভারত এক ধরনের উচ্চ পর্যায়ের পতাকা বৈঠক- যেহেতু এই ধরনের হঠাৎ করে বন্যা.. যেহেতু আমরা ও ইন্ডিয়া একই ধরনের ক্যাচমেন্ট এরিয়া শেয়ার করি, অনেক সময় আমাদের ডেল্টাটাও ওভারল্যাপ করে, উই শেয়ার দ্য সেম ওয়াটার। সেজন্য ওনার কথা হচ্ছে. এটা খুবই হাই লেভেল একটা কোলাবরেশন এবং জরুরি ব্যবস্থায় এটা যাতে কার্যকর করা যায়, খুব দ্রæত মিটিং নিয়ে এটা জানানো’।
প্রেস সচিবের ভাষ্য, ইউনূসকে ভারতের দূত বলেছেন, ‘ত্রিপুরায় যে বন্যা হচ্ছে সেটাও নজিরবিহীন। সেখানেও ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উনি বলেছেন, ইট হ্যাজ ক্রিয়েটেড হ্যাভোক অন বোথ সাইডস, বোথ ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’- প্রণয় ভার্মার কথা তুলে ধরেন প্রেস সচিব।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রণব ভার্মার বৈঠকেও বাঁধ খুলে দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ভারতীয় দূতের ভাষ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরায় বৃষ্টি হচ্ছে, সেটার কথা হয়েছে। বাঁধের কথা এসেছে, বলেছেন যে অটোমেটিক রিলিজটা হয়েছে। এত পানির উচ্চতা, এত পানি, ফলে এটা থেকে অটোমেটিক রিলিজটা হয়েছে’।

বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ :
প্রণব ভার্মার বক্তব্যে এই বিষয়টিও উঠে আসে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় দূতের কথায় এসেছে যে, উনারা বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন ও ভারতীয় দূতাবাসের স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। সোশাল মিডিয়াতে কিছু পোস্ট হচ্ছে, যেটা দুঃখজনক। যারা এটা করছে সেটা খুবই দুঃখজনক’।
বন্যা নিয়ে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে এক দল শিক্ষার্থী, যারা এই দুর্যোগের জন্য ভারতকে দায়ী করেছে। আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূর।

শক্তিশালী বাংলাদেশ দেখতে চায় ভারত :
প্রেস সচিব জানান, ড. ইউনূসকে প্রণব ভার্মা বলেছেন, তারা একটি শক্তিশালী ও উন্নত বাংলাদেশে বিশ্বাস করেন। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চান। উনি মোর পজিটিভ এনগেজমেন্টের কথা বলেছেন বাংলাদেশের সাথে।
প্রেস সচিব জানান, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও কথা হয়েছে। ভারতীয় দূত দুই দেশের মানুষদের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে বলেছেন। উনি বলেছেন যে- গত বছর ১৬ লাখ লোক বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ পর্যটনের জন্য, ৩০ শতাংশ চিকিৎসার জন্য, অন্যান্য ১০ শতাংশ। বিশ্বের যে কোনো দেশের জন্য এটা সর্বোচ্চ ভিসা অপারেশন। তিনি বলেছেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
ভারতীয় দূতকে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ একটা বড় পরিবার। আমরা সবাই ভাই বোন। সবাইকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে আছি।