বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলা শহর থেকে ধীর গতিতে পানি নামলেও আকাশে ভারি মেঘ ও থেমে থেমে বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি ও লামা উপজেলায় বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলা শহরসহ লামা পৌর সদরের প্রধান সড়কে চলছে নৌকা।
এদিকে টানা সাতদিন ধরে সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে।
গতকাল রবিবার সকালে দেখা গেছে, শহরের জর্জ কোর্ট এলাকা, ফায়ার সার্ভিস এলাকা, হোটেল পূরবী এলাকা, বালাঘাটার আম বাগান এলাকা, আর্মি পাড়া, এসপির বাংলো, ইসলামপুর, শেরে বাংলা নগর, উজানি পাড়া, মেম্বার পাড়া, ওয়াপদা ব্রিজ এলাকা, কাশেম পাড়া, বালাঘাটা, কালাঘাটা, ক্যাচিংঘাটা, বনানী সমিল এলাকা, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশনসহ সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে আছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছে হাজারো মানুষ। সদর হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা ডুবে যাওয়ায় রোগীদের যাওয়া আসা করতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকার জন্য ইতিমধ্যে ৪৫০ মে. টন খাদ্য এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পুরো জেলাতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩১টি করা হলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় লোকজন বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
অপরিদেক সাত দিনের টানা বর্ষণে জেলা শহরসহ বন্যা কবলিত এলাকায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রæ জানান, বন্যা দুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলায় ৪১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টার এবং বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নেওয়াদের এ সেবা দেয়া হচ্ছে। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল টিম। জরুরি হলেই সদর হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
জলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে ৫ উপজেলা মারাত্মকভাবে এবং ২টি উপজেলা আংশিকভাবে ক্ষতি হয়েছে। এতে ১শ ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫০ মে. টন জিআর চাল, ২ লক্ষ টাকা, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ পানি ও খাবার স্যালেইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলার ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম ও স্বাস্থ্যদানকারী সংস্থাকে।