নিজস্ব প্রতিবেদক
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে যেন স্বস্তি ফিরছে না কিছুতেই। একদিকে দাম কমলে অন্যদিকে শুরু হয় বাড়ানোর পাঁয়তারা। দ্রব্যমূল্য নিয়ে বরাবরই ভোক্তাদের অভিযোগ থাকলেও নানা অজুহাত নিয়ে বিক্রেতারাও থাকেন সদা প্রস্তুত। আবার সপ্তাহ ধরে কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। কয়েকটি সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় সেগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।
গতকাল নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস। এদিকে বাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজি হিসেবে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো ও গাজরের দাম এখনো চড়াই রয়েছে। পাকা টমেটো আগের সপ্তাহের মতো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের বাজারে তেমন দেখা মিলেনি। শিমের পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের অন্যতম সবজি বাঁধাকটি ও ফুলকপি। ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। আজকের বাজারে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ টাকা করে। তবে তুলনামূলক দাম কমার তালিকায় আছে মুলা। শীতের আগাম এ সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা করে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। ফলে দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
তাছাড়া সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
মুরগি বিক্রেতা আবু রায়হান বলেন, গত কয়েকদিনে তুলনায় আজ ব্রয়লার মুরগির দামটা একটু বেশি। গত সপ্তাহেও ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আজকে ১৮০ টাকা। বাজারে মুরগির চাহিদা বেশি, কিন্তু সে অনুযায়ী সাপ্লাই নেই। শুনেছি বন্যার কারণে অনেক খামারির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যে কারণে সেই চাপটা এসে পড়েছে বাজারে।
তিনি আরও বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাংসের চাহিদাটা একটু বেড়ে যায়। বাজারে যদি সেই পরিমাণে সরবরাহ না থাকে তাহলেই দাম বেড়ে যায়। এখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
মাছের বাজারে পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ছাড়া আর কোনো মাছেই তেমন স্বস্তির খবর পাওয়া যায়নি। বাজারে প্রতিকেজি পাঙ্গাস ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছ ৩০০ টাকা, চাষের শিং ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সাগরের পোয়া ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা আকবর হোসেন বলেন, আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। কলিজা বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা করে। এছাড়াও গরুর পায়া ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জোড়া। তবে কেউ কেউ ৭৫০ টাকায়ও বিক্রি করছে। বিষয়টা আসলে নির্ভর করে মাংসের মানের ওপর।
বহদ্দারহাট বাজারে বাজার করতে আসা মারুফুল ইসলাম হৃদয় নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। আগে যা রোজগার করতাম, এখনও তা করি।কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাওয়ার উপায় নেই।