ভারত থেকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনুপ্রবেশের সমস্যা নতুন করে ভোগাচ্ছে। দুই দেশের সীমান্তের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই সমস্যা বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হওয়ার আগে থেকেই রয়েছে। এখনও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া অনেক জায়গাতেই নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন উসকে দিয়েছে সীমান্ত ইস্যু।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের ৫ম দীর্ঘতম ভূমি সীমানা। দুই দেশের মধ্যে চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, গরু পাচার, মাদক এবং অস্ত্র পাচার নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকবার সীমান্ত পতাকা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি জেলার সীমান্তে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে আপত্তি তোলার পর উত্তেজনা তৈরি হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সীমান্ত লাইন থেকে দেড়শ গজের মধ্যে কিছু করা হলে তা অপর পাশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে অবহিত করতে হয়। বিজিবি প্রধান জানিয়েছেন, ভারতের অনুপ্রবেশকারী নাগরিকদের হত্যা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে তাদের আইনানুগভাবে ফেরত পাঠানো কঠিন হয়ে পড়বে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশসহ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, চীন, ভুটান ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। গত ১১ বছরে বাংলাদেশের সীমান্তগুলোতে বিএসএফের গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছে ২৮৯ বাংলাদেশি। বাংলাদেশ-ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশের সীমান্তে এমন হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় না। সীমান্ত নিয়ে বাড়াবাড়িতে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি। সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে যেহেতু আমাদের চুক্তি রয়েছে, তা মেনে চললেই কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো দেশের স্থাপনা থাকতে পারবে না, এটিই নিয়ম। যে ধরনের সমস্যার উদ্ভবই হোক না কেন, কেবলমাত্র পারস্পরিক আলোচনাই সমস্যার সম্মানজনক সমাধান আনতে পারে।
এদিকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় চলে এসেছে। মিয়ানমার পরিস্থিতির কারণে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশকে নিজের সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। ক‚টনৈতিক পন্থা ছাড়াও বিকল্প সমাধানসূত্র ধরে অগ্রসরের চেষ্টাও করতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও সশস্ত্র সংঘাত দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকলে বাংলাদেশের জন্যও নতুন নতুন বিপদ তৈরি হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং বিজিবি মহাপরিচালক জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি নিরাপদ, তবে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নেওয়া নতুন পদক্ষেপগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, “মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি বর্তমানে নিরাপদ রয়েছে, তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন কৌশল নিচ্ছে বাংলাদেশ। সীমান্ত নিরাপদ রাখার জন্য প্রশাসন, বিএসএফ এবং মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।” আমরা চাই, অবৈধ অনুপ্রবেশে বন্ধ হোক এবং সীমান্ত হত্যা আর যেন না হয়।