নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর চান্দগাঁও বিসিক শিল্প এলাকায় ‘বন্ধু সমিতি’র অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত লাভের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা জমা নেওয়া হলেও একপর্যায়ে সমিতির টাকা নিয়ে উধাও হন সংশ্লিষ্টরা। পরে এই ঘটনার চাপ সামাল দিতে অপহরণের নাটক সাজানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, একটি গার্মেন্টস কারখানার সুপারভাইজার পদে কর্মরত ব্যক্তি ‘বন্ধু সমিতি’র মাধ্যমে সহকর্মী ও পরিচিতদের টাকা জমা রাখতে উৎসাহিত করেন। পরে সমিতির টাকা নিয়ে উধাও হলে শ্রমিকরা সুপারভাইজারের ওপর চাপ দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি নিজেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে নাটক সাজান।
ঘটনার পর চান্দগাঁও থানা যুবদল নেতা মো. সোহেল ও থানা ছাত্রদলের আহব্বায়ক আলফাজ সুপারভাইজারকে চাপ দিয়ে শ্রমিকদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সুপারভাইজার বিষয়টি ভিন্নভাবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন করেন, যেখানে তাকে চাঁদাদাবির শিকার বলে বলা হয়। এরপর তাৎক্ষণিক মহানগর ছাত্রদলের আহব্বায়ক সাইফুল আলমকে এ ঘটনা তদন্ত করতে বলা হয়। তবে তদন্ত শেষ করার আগেই তাকে শোকজ করেছে কেন্দ্র।
জানতে চাইলে নগর ছাত্রদলের আহব্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, শুক্রবার কেন্দ্র থেকে আমাকে তথ্যটি জানানো হয়। আমি খোঁজ নিয়ে এমন ঘটনার কোন অস্তিত্ব পাইনি। এর মধ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের অনেকের নাম বলেন। সবার সাথে এই বিষয়ে জানতে কিছু সময়ের তো প্রয়োজন। এর মধ্যে আমাকে শোকজ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে আমি ছাত্রদলের কোন সংশ্লিষ্টতা পাইনি।
টাকা আত্মসাৎ হওয়া ওই গার্মেন্টসের ফাতেমা বেগম বলেন, আমি শ্রমিক মানুষ। আমার দীর্ঘদিনের চাকরির সব টাকা সুপারভাইজারের কাছে বেশি লাভের আশায় রাখি। এখন আমি কোন টাকা পাচ্ছি না। আমি উকিল নোটিশ দিয়েছি।
এদিকে সুপারভাইজারকে অপহরণ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার রাত ১০টার দিকে ছুটি শেষে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তার উপর থেকে অজ্ঞাত ৩-৪ জন লোক তাকে টেনে-হিচড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তোলে। সেখান থেকে চান্দগাঁও থানাধীন সিএন্ডবি টেকবাজার রেললাইনের সামনে নামিয়ে একটি অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা ভুক্তভোগীকে মারধর ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে জানালে পরিবার চান্দগাঁও থানাকে অবহিত করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এর আগে অপহরণকারীরা পুলিশের অবস্থান টের পেরে কয়েকটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় আসামিদের একজনের নাম সোহেল বলে ভুক্তভোগী জানতে পেরেছেন। সোহেল যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সমিতির টাকা মেরে দেওয়াকে কেন্দ্রে করে তাকে (সুপারভাইজার) চাপ দেওয়া হয়। এটাকে তিনি অপহরণ ঘটনা বানান। প্রশাসনকে বলেছি, আইনগত যে ব্যবস্থা, সেটা আপনারা নেন।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, শনিবার রাতে ওই ব্যক্তিকে তিনজনে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ গেলে তারা পালিয়ে যায়। এটি অপহরণ ঘটনা। যদি সমিতির টাকা পেয়ে থাকে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নিত। সেজন্য তো একজন মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তুলে নিয়ে যেতে পারে না।