রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি
কর্ণফুলী নদীতে শখের বসে মাছ শিকার করতে আসা মানুষের বড়শিতে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। নদীর রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই অংশের বিস্তীর্ণ অংশে যাদের বড়শিতে মাছ ধরার নেশা আছে তাদেরকে নিরাশ করছে না মিঠা পানির মাছ। বড় আকারের ৫ থেকে ১৪ কেজির রুই, কাতল, মৃগেল, কোরালসহ নান প্রজাতির মাছ আটকাচ্ছে বড়শিতে।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর কমপক্ষে ১৫-২০টি স্পটে এখন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বড়শি ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ছে নিয়মিতই। গত শনিবার চন্দ্রঘোনার মিশন এলাকার ডিসকন খিয়াং এর বড়শিতে ১২ কেজি ওজনের রুই মাছ ধরা পড়ার দৃশ্য চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের। এর আগে শীলছড়ি এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে আসা সৌখিন মৎস শিকারি মনোয়ার হোসেনের বড়শিতে ৭ কেজি ওজনের কাতল মাছ ধরা পড়তে দেখা যায়। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (পিডিবি) কর্মচারী মো. আলী হোসেন বড়শি ফেলে ধরে ফেলেন ২৩ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের একটি কোরাল মাছ।
অপর দিকে নদীর মাঝ খানে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় বসে বড়শি ফেলা হয় কর্ণফুলী নদীতে। তারপর সেই বড়শি দিয়েই তুলে আনা হয় তরতাজা চিংড়ি মাছ।রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা শ্যামাপাড়া এলাকার বামা চরণ দাশ বলেন, এসব চিংড়ি ধরতে বড়শিটাও বিশেষভাবে লোহার চিকন তার দিয়ে বানানো। সেই বড়শিতে চিংড়ির দাঁত লাগিয়ে সজোরে টান মেরে নৌকায় তোলা হয়। নৌকায় পানিতে রাখা হয় জ্যান্ত অবস্থায়। সেসব চিংড়ি জ্যান্ত অবস্থায় রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাইয়ের মাছ বাজারে বিক্রির জন্য নেওয়া হয়। আমরা এ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। সেখানে প্রতিকেজি মাঝারি সাইজের (২০-২৫ পিস) চিংড়ি ৮০০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
কর্ণফুলী নদীর শীলছড়ি এলাকায় বড়শি ফেলা রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটার আহম্মদ হোসেন জানান, আমি গত কয়েকদিন আগেও এসেছি। তখন ৪ কেজি ওজনের ২টি রুই মাছ ধরতে পেরেছি। আজকে ভাগ্যে কি আছে সৃষ্টি কর্তাই ভালো জানেন।
আবার পেশাদার জেলেদের বড়শি ও জাল ফেলেও মাছ ধরতে দেখা যায় নদীর বিভিন্নপ্রান্তে। প্রতিদিন কর্ণফুলীর নদীর বিস্তীর্ণ অংশে চিংড়ি ও নানা জাতের মাছ ধরতে দেখা যায় তাদের। সন্তোশ দাশ নামে এক জেলে জানান, প্রতিদিন তাদের বড়শি ও জালে ধরা পড়ছে চিংড়ি মাছ। তরতাজা এসব চিংড়ির স্বাদও অতুলনীয়। সাধারণত প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ কেজির মতো চিংড়ি পান জেলেরা। এই চিংড়ি মাছ বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। সবসময় এ চিংড়ি ধরা যায় না। নদীর পানি যখন পরিষ্কার থাকে তখন ধরা পড়ে এসব চিংড়ি। স্থানীয় ভাষায় এসব চিংড়িকে বলা ‘ছোঁয়া ইছা’।
রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মো জমির হোসেন জানান, তাদের ধরা মাছ কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মাছ কিনতে আসেন। আমরা বড়শি দিয়ে ধরা মাছগুলো প্রতিদিনই বিক্রি করে আসছি। এসব মাছের চাহিদা ব্যাপক। দামও ভালো পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে জানান, একসময় বিভিন্ন কল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থে দূষিত হতো কর্ণফুলী নদী। যার ফলে মাছের প্রজনন কমে গিয়েছিল। বর্তমানে কর্ণফুলী নদী দূষণমুক্ত রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে কর্ণফুলী নদীতে মাছের প্রজনন বাড়বে এবং এর সুফল সবাই পাবে।
নদীর পানি ঘোলা থাকলে বড়শি কিংবা জালে নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। কারণ, ঘোলা পানিতে নানা জাতের মাছ ও চিংড়ি মাছ বড়শি দেখতে পায় না। বড়শিতে ধরা পড়া মাছগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু।