পূর্বদেশ ডেস্ক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু নিয়ে এক ওয়ার্ডবয়ের বিরুদ্ধে চরম অবহেলার অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বখশিশ না দেওয়ায় অক্সিজেনের পানির সরবরাহ বন্ধ করে রাখার কারণে শিশুটি মারা গেছে। ওই নবজাতকের বাবা কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালি ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৭ দিন আগে চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে ওই নবজাতকের জন্ম হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় সেখান থেকে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়। গত ৯ মার্চ নবজাতককে চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিল শিশুটি। এদিকে, গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে শিশুটি স্বাভাবিক আচরণ করছিল এবং খেলা করছিল। একপর্যায়ে অক্সিজেনের পানি শেষ হয়ে গেলে নবজাতকের বাবা বেলাল ওয়ার্ডবয়কে নতুন পানি দিতে বলেন। অভিযোগ ওঠেছে, বখশিশ না দেওয়ায় ওয়ার্ডবয় অক্সিজেনের পানি সরবরাহ বন্ধ রাখেন। এরপর শিশুটির বাবা-মাকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কথা বলে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হয় বাইরে। পরে যখন তারা প্রবেশের অনুমতি পান, তখন দেখেন শিশুটি মারা গেছে। খবর সিভয়েস এর।
শিশুটির বাবা বেলাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘এই হাসপাতালের নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা বখশিশ ছাড়া একও কদম নড়ে না। প্রতিবার অক্সিজেন লাগানোর জন্য ২০০ টাকা করে চাওয়া হয়। কিন্তু আজ টাকা না দেওয়ায় আমার সন্তানের জীবন চলে গেল। আমরা গরিব মানুষ। দিনমজুরি করে চলি। গরিব বলেই এখানে আসছি, প্রতিবার ২০০ টাকা করে কই পাবো? ওদেরকে ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে গেলেও আসে না। টাকা দিলেই কাজ করে, নয়তো করে না।’
হতাশার সুরে দিনমজুর এই বাবা বলেন, ‘ওরা যদি অক্সিজেনের পানিটা দিতো, তাইলে আমার বাচ্চা সুস্থ থাকতো। আজ টাকা দিতে পারলাম না, দিতে পারলে আমার বাচ্চাটা ঠিক থাকতো। আমার স্ত্রী হার্টের রোগী। বাচ্চার জন্য কান্না করতে করতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে, চমেক হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডবয় ও নার্সদের বিরুদ্ধে বখশিশ ছাড়া কাজ না করার অভিযোগ রয়েছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, তারা প্রয়োজনীয় সেবা পেতে টাকা দিতে বাধ্য হন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি একটু আগে ঘটনাটি জেনেছি। আমরা দ্রুত বিভাগীয় প্রধানকে আহব্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। কোন ওয়ার্ডবয় এ ঘটনায় জড়িত, তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’