নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা পরিচালিত নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে না দেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ইসলামি শ্রমিক সংঘ।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর ইসলামি শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আহবান জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের অন্যতম প্রধান অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হলো চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের শতকরা ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানির মাধ্যম হলো চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের একটি অন্যতম টার্মিনাল হলো পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), যা ইতিমধ্যে সৌদি প্রতিষ্ঠান আরএসজিটিকে ২২ বছরের জন্য দিয়ে গেছে বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকার।
নতুন এই টার্মিনালটির অপ্রকাশিত চুক্তির যতটুকু অংশ আমরা জানতে পেরেছি তা হলো- চুক্তির মেয়াদ ২২ বছর। বছরে আড়াই লাখ টিউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর জন্য পিসিটিতে জাহাজ বাথিং দিতেই হবে, যেখানে পিসিটির ক্যাপাসিটি ৫ লাখ টিউস। প্রতি টিউসে বন্দর পাবে ১৮ ডলার (২.৫ লাখ টিউস পর্যন্ত)। আড়াই লাখ টিউস এর অতিরিক্ত হলে বন্দর পাবে প্রতি টিউসে ৯ ডলার। বন্দর অভ্যন্তরে চট্টগ্রাম বন্দর প্রতি টিউস আমদানি কন্টেইনারে ৯০ ডলার এবং রপ্তানি কন্টেইনারে ৬০ ডলার পেয়ে থাকে, যার ৫০ শতাংশ খরচ হলেও নিট লাভ ১৮ ডলারের অনেক বেশী। অথচ পরিসংখ্যান হলো আরএসজিটি পাবে ৭০ শতাংশ, বন্দর পাবে মাত্র ৩০ শতাংশ। আর পিসিটিতে বন্দরের অবকাঠামোসহ উন্নয়ন ব্যয় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যেখানে আরএসজিটির ইনভেস্টমেন্ট ২২০ কোটি টাকা অর্থাৎ ৯ শতাংশ মাত্র।
উদাহরণ স্বরূপ, গত জুলাই-২৪ থেকে ডিসেম্বর-২৪ পযন্ত পিসিটিতে মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৩ টিউস। সেখান থেকে পিসিটির বিল ২২ কোটি টাকার বিপরীতে বন্দর পেয়েছে ৬ কোটি টাকা মাত্র। এভাবেই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিদেশে টাকা চলে যাবে বৈধ ভাবে।
এছাড়া পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সৌদি প্রতিষ্ঠান আরএসজিটির সাথে এমওইউ চুক্তি হয়। ঠিকানা সৌদি আরব কিন্তু ফাইনাল চুক্তি হয় আরএসজিটির সাথে ঠিকানা লন্ডন।
বিশ্লেষকদের দাবি, পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী সালমান এফ রহমান, সাবের হোসেন চৌধুরী ও হাসিনা পুত্র জয় পার্টনার হওয়ায় এই পরিবর্তন।
শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী নই। আপনার উদ্যোগে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে এবং আসবে। কিন্তু এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সর্ববৃহৎ টার্মিনাল যেখানে বর্তমানে বন্দরের ৫৫ শতাংশ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। সেখান থেকে গত বছরে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে গত বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সুসজ্জিত টার্মিনাল যেখানে বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের কোন প্রয়োজন নেই। সেই টার্মিনালটি আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়া জি-টু-জি পদ্ধতির মত স্বেচ্ছাচারী পদ্ধতির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি কোন কোম্পানিকে পিসিটির মত ছেড়ে দেয়া আদৌ লাভজনক হবে কিনা আপনার সদয় বিবেচনার জন্য পেশ করছি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এনসিটি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে তৎপর ছিলেন সালমান এফ রহমান গং। বর্তমানে ছদ্মবেশে তাদের দোসররা ফ্যাসিষ্টদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে কিনা ভেবে দেখবেন। ইতিমধ্যে ডিপি ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ৩১ জনের পাশের আবেদন করেন তার মধ্যে ১৯ জন ভারতের আর ১ জন বাংলাদেশি। দেশের স্বার্থে ও বন্দরের স্বার্থে ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার যে কোন পদক্ষেপে পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বন্দর শ্রমিকরা।