জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুক্ত গণমাধ্যমের পক্ষে বলে জানিয়েছেন দলটির আহব্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে মিডিয়ার ভেতরে যে ফ্যাসিজম প্রবেশ করেছে সেখান থেকে মিডিয়াকে বের করতে স্পষ্ট রূপরেখা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় নাহিদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি মুক্ত গণমাধ্যমের পক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র চর্চার জন্য, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য মুক্ত গণমাধ্যম অতি গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড। ফলে মতপ্রকাশের অধিকার হরণ থেকেই আমাদের আন্দোলনের যাত্রা শুরু। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সেই আকাঙ্খা নিয়ে বলতে চাই, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে গণমাধ্যমে দলীয়করণ, সরকারের হস্তক্ষেপ, সামাজিক চাপ থেকে বের হয়ে গণমাধ্যম কাজ করতে পারবে এবং সাংবাদিকরা তাদের নিরাপত্তা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে মানুষের পক্ষে কাজ করতে পারবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, মুক্ত গণমাধ্যমের প্রত্যাশা ও আকাঙ্খায় দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো লড়াই করেছে। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি, বাংলাদেশ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি সুখবর হলেও আমাদের আকাঙ্খা ও প্রত্যাশা ছিল এ দেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি আরও ভালো থাকবে। সেই সূচককে একটি মানদন্ড ধরলে আমরা এখনো অনেক নিচের দিকে আছি। বিগত ১৬ বছর একটি ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্য দিয়ে অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো গণমাধ্যমও দলীয়করণ এবং ফ্যাসিজমের দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। খবর বাংলানিউজের
তিনি বলেন, মিডিয়া এবং ফ্যাসিজমের সম্পর্ক বিগত সময়গুলোতে কী ছিল এবং মিডিয়ার ভেতরে যে ফ্যাসিজম প্রবেশ করেছে সেখান থেকে মিডিয়াকে আমরা কীভাবে বের করতে পারবো সেই বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা প্রয়োজন। কারণ আমরা দেখছি, মিডিয়া এবং ফ্যাসিজমের যে সম্পর্ক বিগত সময়ে ছিল, সেই সম্পর্ক থেকে এবং আদর্শিক আধিপত্যের জায়গা থেকে যদি মিডিয়া বের না হয়, তাহলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে আমরা যে মুক্ত গণমাধ্যম প্রত্যাশা করি এবং জনগণের মিডিয়ার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হবে না। মিডিয়ার সুশাসনের বিষয়টি মিডিয়ার ভেতর থেকেই নিশ্চিত করা উচিত। সেই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত’।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ক ইতিবাচক হবে প্রত্যাশা করে নাহিদ বলেন, যে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতিশ্রুতি আমরা সবাই দিচ্ছি, সেটি আরও কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করে রূপরেখা তৈরি করতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত আসা উচিত। আমি মনে করি, সেই সংস্কারের রূপরেখাগুলো এলে এবং বাস্তবায়ন হওয়া শুরু করলে আমরা বলতে পারবো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে গণমাধ্যমের পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম নানামুখী চাপের মধ্যে পড়েছে। তবে গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ অনেক কমেছে। আমার সময়ে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের জায়গা একেবারেই কম ছিল। কিন্তু সামাজিক নানা ধরনের চাপ তৈরি হয়েছিল গণমাধ্যমের ওপরে। সেই সামাজিক চাপগুলো কেন বিশেষ বিশেষ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হয়েছিল, সেটা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই গণমাধ্যমের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করার পক্ষে আমরা কখনোই বলিনি। বরং বিভিন্ন সময়ে যখন এই আলোচনাগুলো এসেছে, আমরা গণমাধ্যমের পক্ষে থেকেছি। একইসঙ্গে বিগত সময়ে গণমাধ্যমের ভ‚মিকা বা গণমাধ্যমের ভেতরে নানান ফ্যাসিবাদী প্রবণতা, সেটার বিরুদ্ধে কখনো কখনো বলেছি।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সম্পাদক পরিষদের সহ-সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবীর, পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহব্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী প্রমুখ।