ফের সক্রিয় দালালচক্র

59

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালদের সিন্ডিকেট। হাসপাতালের ভিতরে বাইরে ওঁৎপেতে থাকা দালালদের চেনা দায়। কমিশনের লোভে হাসপাতালে আসার পথে কিংবা ভিতর থেকে রোগীদের উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায় দালালরা। তাদের খপ্পরে পড়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনা অহরহ।
এদিকে চমেক হাসপাতালে দালালদের উৎপাত নির্মূলে একগুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। তাছাড়া দালালদের তৎপরতা বন্ধে প্রায় সময় অভিযান পরিচালনা করছেন। তারপরও হাসপাতাল থেকে সক্রিয় দালালদের সিন্ডিকেট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ বলে মনে করছেন রোগীর স্বজনরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু হলে পুরো হাসপাতাল দালালমুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চমেক হাসপাতালে দালালদের উৎপাতের কারণে প্রতিদিন বড় অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এমনকি চমেক হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আয়ের উৎস এই হাসপাতাল।দালালদের কারণে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় ও দরিদ্র মানুষগুলো সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে সঠিক চিকিৎসা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন।
এদিকে গত শুক্রবার ফটিকছড়ি থেকে ইয়াসমিন আখতার নামের এক গর্ভবতী আসেন চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। চিকিৎসকের পরামর্শে সেখান থেকে হাসপাতালে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে রেফার করা হয়। এসময় দালালরা রোগীর স্বজনকে নানা প্রলোভনে আকৃষ্ট করে একটি দীর্ঘ ওষুধের তালিকা হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর দালালদের একজন রোগীর স্বজনকে ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৮ হাজার টাকার ওষুধ কিনে দেয়। স্বজনের কাছে এত টাকা না থাকায় মোবাইল অন্যজনের কাছে বন্ধক দিয়ে ওষুধ নিতে হয়। এরপর ওষুধ নিয়ে ওয়ার্ডে গেলে সেখানেও দালালরা ঘিরে ধরে।
একইভাবে বাঁশখালী থেকে আমেনা বেগম নামের এক মহিলা প্রসব বেদনা নিয়ে চমেক হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসকের পরামর্শে গাইনি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীর স্বজনকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা হাতিয়ে নেয় প্রায় হাজার টাকা।
এছাড়া গত ১৬ ফেব্রæয়ারি সাতকানিয়া থেকে মো. সেলিম তার স্বজনকে নিয়ে আসেন হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের সামনে একই এলাকার পরিচয় দিয়ে এক দালালের খপ্পরে পড়ে আর চিকিৎসা নেওয়া হয়নি। একটি বেসরকারি ল্যাবে নিয়ে গিয়ে নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষার কথা বলে প্রায় ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
শুধু এসব ঘটনা দিয়ে শেষ নয়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিদিন অজস্র রোগী এসব দালালদের ফাঁদে পড়ে ব্যয় করতে হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ টাকা। পুরো হাসপাতাল জুড়েই ছদ্মবেশে সুযোগের সন্ধানে বসে থাকেন দালালদেও সিন্ডিকেট। এভাবে প্রতিনিয়ত তাদের হাতে জিম্মি হচ্ছে শত শত রোগী। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করার যেন কেউ নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির বলেন, হাসাপাতাল এলাকায় দালাল পেলে পুলিশে দিচ্ছি। এই পর্যন্ত ২০ জন দালালকে পুলিশে দিয়েছি। আর দালালদের আমি দালাল দিয়ে ছবি তুলে সামাজিকভাবে হেনস্তা করছি।
তিনি বলেন, হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার জন্য অনেকগুলো পরিকল্পনা নিয়েছি। যা ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। হাসপাতালে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু হলে পুরো চমেক হাসপাতাল দালালমুক্ত হবে। আর আমরা হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করেছি।
চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে রোগীদের সেবা পেতে মূল বাঁধা হলো দালালচক্র। তাদের সাথে জড়িত আছে হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আমরা চেষ্টা করছি দালালমুক্ত করে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে। হাসপাতালে দালালদের উৎপাত বন্ধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এতে দালালদের উৎপাত অনেক কমে যাবে। সেই সাথে কমে যাবে রোগীদের ভোগান্তি।