ফিল্মি স্টাইলে জায়গাটি আবার দখল করল আ. লীগ নেতা

30

কর্ণফুলী প্রতিনিধি

কর্ণফুলী উপজেলায় মইজ্যারটেক এলাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযান শেষে উচ্ছেদকৃত সড়কের জায়গা ফের দখলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবদুল মান্নান। গত সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শিকলবাহা ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান শতাধিক লোক নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে ওই জায়গাটি দখলে নেন। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ১১টা থেকে সিডিএ’র পূর্বঘোষিত উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকায়। অভিযান শেষে সাড়ে চারটার দিকে মইজ্যারটেক মোড়ে পৌঁছে মাওলানা মুছার লিজকৃত জমিতে থাকা ৮-১০টি দোকান উচ্ছেদ করে সিডিএ। অভিযান শেষ করে সিডিএ’র দল চলে যাওয়ার পরপরই মান্নান বাহিনী টিনের শেড দিয়ে সড়কসহ পুরো এলাকা ঘিরে মান্নান নিজের আয়ত্তে দখলে নেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্বঘোষিত উচ্ছেদ অভিযান শেষে বিকেল ৪টার দিকে পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকা ত্যাগ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর টিম। চলে যাওয়ার পথে খুইদ্যারটেক এলাকায় একটি দোকান গুঁড়িয়ে দেয় তারা। পরে সাড়ে ৪টার দিকে মইজ্যারটেক মোড়ে অভিযান চালিয়ে মাওলানা মুছার আগে থেকে লিজ নেওয়া জমি উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে থাকা ৮-১০টি ঝুপড়ি দোকান ভেঙে ফেলা হয়। তবে ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই একদল ভাড়া করা সন্ত্রাসী টিনের বেড়া দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে জায়গাটি ফের দখলে নেয়।
অভিযোগ ওঠেছে, এই কাজের পেছনে ছিলেন শিকলবাহা ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান। সরেজমিনে অভিযোগের সত্যতাও পেওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সিডিএ’র উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে কিছু দোকান অক্ষত রাখা হলেও মান্নান বাহিনী এসব দোকানও দখল করে নেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মইজ্যারটেক থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে, যা জলাশয় ভরাট করে নির্মিত। কিন্তু সিডিএ’র অভিযান কেবল কয়েকটি দোকান উচ্ছেদে সীমাবদ্ধ ছিল, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে এলাকাবাসী। একাধিক স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, সিডিএ’র অভিযানে ঘুষ লেনদেনের হয়েছে। তাদের দাবি, প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্ধকারে রেখে একপক্ষকে উচ্ছেদ করে আরেকপক্ষের দখল নিশ্চিত করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাওলানা মুছা জানান, সিডিএ’র অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের এনে জায়গাটি উচ্ছেদের ১০ মিনিটের মধ্যে দখলে নেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, একজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান সময়ে এসে কীভাবে প্রকাশ্যে সরকারি জমি দখল করতে পারে, এটা প্রশাসনের কাছে আমাদের বড় প্রশ্ন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে মান্নান তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এখনো বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছেন, যার মধ্যে ভূমি দখল অন্যতম।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম জানান, মইজ্জ্যারটেকে উচ্ছেদকৃত জায়গা আমরা কাউকে লিজ দিই নাই। আবদুল মান্নান নামের কাউকে আমরা চিনি না, কেউ যদি দখল করে তাকে তাহলে সিডিএ প্রশাসন গিয়ে জায়গাটি আবারও উচ্ছেদ করা হবে।
শিকলবাহা ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য আর্থিক প্রস্তাব দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা এবং স্থানীয়দের দিয়ে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল দিয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।