ফিডার রোড ও স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ভাগ্য ঝুলে আছে

63

হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় পৃথক দুটি প্রকল্প নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম ওয়াসার মধ্যে। একই জায়গার উপর পৃথক দুই সংস্থার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতায় ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল প্রকল্পগুলো। সমস্যা উত্তরণে দুই সংস্থা বসে সমন্বয় সভায়।
একমাসের মধ্যে করণীয় প্রতিবেদন ঠিক করতে গঠন করা হয় শক্তিশালী কমিটি। কিন্তু সময় শেষ হতে চললেও এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিটি।
নগরীতে স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য হালিশহর এলাকায় ১৯৬৩ সালে ১৬৩ একর ভূমি হুকুমদখল করেছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জায়গাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। এলাকার মানুষের হাঁটাচলার কারণে ক্রমে প্রকল্প এলাকার মাঝখানে একটি রাস্তা গড়ে উঠে। আরএস খতিয়ানে সেখানে কোন রাস্তা না থাকলেও বিএস খতিয়ানে দেখানো হয় রাস্তা। সিডিএর আউটার রিং রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার পর রাস্তাটির ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সিডিএ রাস্তাটিকে বড়পুল পর্যন্ত রিং রোডের ফিডার রোডে উন্নীত করতে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। একই সাথে রাস্তাটির পাশে একশ ফুট করে ভূমি সিডিএর নিয়ন্ত্রণে রাখে। যেখানে কোন ধরনের স্থাপনা করতে কাউকে অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় সিডিএ।
অন্যদিকে ওয়াসা জায়গাটিতে চট্টগ্রামের প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএর প্রকল্পের জন্য জায়গা ছাড় দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। বিকল্প হিসাবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সুয়্যারেজ প্রকল্পের একেবারে উত্তর পাশে রাস্তা করার সুযোগ দেয় সিডিএকে। কিন্তু সিডিএ তাদের নির্ধারিত জায়গাতেই (স্যুয়ারেজ প্রকল্পের মাঝ বরাবর) ফিডার রোড করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে, ওয়াসাও কোন ছাড় দিতে সম্মত হয়নি।
ওয়াসার মতে, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের লেআউট তৈরি করেছে মালেশিয়ান বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটি কেপিআই ভুক্ত প্রকল্প। এ ধরনের কেপিআই ভুক্ত প্রকল্পের মাঝখান দিয়ে রাস্তা করার কোন সুযোগ নেই।
অন্যদিকে সিডিএর দাবি, বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ফিডার রোড সোজা হতে হবে, আঁকাবাঁকা হওয়ার সুযোগ নেই। দুই সংস্থার ঠেলাঠেলির এ অবস্থায় গত ৩১ মার্চ সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। পাঁচটি সংস্থার উপস্থিতিতে সমন্বয় সভায় পাঁচ সদস্যের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, বন্দর ও রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলীকে। একমাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী ও কমিটির সমন্বয়ক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ফিডার রোড এবং স্যুয়ারেজ প্রকল্প দুটিরই যেন কোন সমস্যা না হয়, সে চিন্তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ফিডার রোড বাঁকা হওয়া যাবে না, আবার স্যুয়ারেজ প্রকল্পেরও সমস্যা করা যাবে না। আমরা সম্ভাব্য কয়েকটি চিন্তা করেছি। এখন স্যুয়ারেজ বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। আশা রাখছি, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার পর আমরা দ্রুত প্রস্তাব জমা দিতে পারবো।
উল্লেখ্য, সিডিএ ও ওয়াসার বিরোধের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প ঝুলে যেতে পারে। দুই সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম উপকৃত হবে। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত যেমনি হবে, তেমনি পরিবেশ উপকৃত হবে। অন্যদিকে আউটার রিং রোডের ফিডার রোড-২ বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ব্যবসা বাণিজ্যের গতিশীলতা আসবে।