নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর বৃহত্তম পাইকারি ফলের আড়ত স্টেশন রোডের ফলমন্ডি ও সংলগ্ন বয়লার কলোনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গডফাদাররা আত্মগোপনে গেলেও তাদের অনুসারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসীদের নিত্য চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের শিকার হচ্ছে ব্যব্যসায়ী-শ্রমিক ও পথচারীরা।
ফলমন্ডির ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি সিএমপি কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও তাঁর সহযোগী এবং সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ফলমন্ডি ও বয়লার কলোনি এলাকায় অপরাধের জাল বিস্তার করে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোডিং-আনলোডিং শ্রমিকদের কাছ থেকেও গণহারে চাঁদা আদায় করে দুই গ্রুপের সন্ত্রাসী-মাস্তানরা। এছাড়া ফলমন্ডি ও আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চুরি-ছিনতাইয়ের রাজত্ব কায়েম করে তারা। বয়লার কলোনি সংলগ্ন স্টেশন রোডে রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলে ভাড়ায় লাগিয়েছে সন্ত্রাসী চক্রের লোকজন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও সাইফুল আলম লিমন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেলেও তাদের সহযোগীরা এখনও ওই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। দুটি পৃথক সন্ত্রাসী গ্রæপের বর্তমানে নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী মকবুল ও মনির। এ দুজনের নেতৃত্বে ৩০ জনের অধিক ক্যাডার রয়েছে। বর্তমানে তারাই স্টেশন রোডের ফলমন্ডি ও বয়লার কলোনি এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বৃহত্তম পাইকারি ফলের আড়ত ফলমন্ডির একাধিক মোকামের মালিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পূর্বদেশকে বলেন, মকবুল ও মনিরের নেতৃত্বে পৃথক দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে গদিতে চাঁদাবাজি করছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ফল নিয়ে আসা ট্রাকচালকদের কাছ থেকেও তারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। কেউ তাদের চাহিদামত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নেমে আসে নির্যাতন। এছাড়া, দূর-দূরান্ত থেকে ফল কিনতে আসা ব্যবসায়ীদের অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। এদের প্রত্যেকের নামে থানায় মামলা থাকলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তমিজ উদ্দিন নামে একজন লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, এখানে মালবাহী ট্রাক আসলে সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দিয়ে ফলমন্ডির ভেতরে ঢুকতে পারে না। শুধু তাই নয়, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিকদের কাছ থেকেও তারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। মাঝে মধ্যে তাদেও করেয়কজন পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও জামিনে এসে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
সিএমপির কোতোয়ালী থানার অধীন সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রবিউল হক এ বিষয়ে পূর্বদেশকে বলেন, আমি এখানে এসেছি মাত্র কিছুদিন আগে। সিএমপি কমিশনার স্যারের দপ্তর থেকে বয়লার কলোনি ও ফলমন্ডি এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা পেয়েছি। শীঘ্রই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।