ফটিকছড়িতে জমির দামের চেয়ে নিবন্ধন খরচ বেশি!

390

ফটিকছড়ি উপজেলায় কৃষিজমির দামের চেয়ে নিবন্ধন খরচ বেশি। এ কারণে অনেকে জমি কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আবার জমি কিনলেও খরচ এড়াতে অনেকে তা নিবন্ধন করছেন না। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মুহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, সম্প্রতি তিনি নাজিরহাট পৌরসভা এলাকার পূর্ব-ফরহাদাবাদ মৌজায় প্রতি শতক ২০ হাজার টাকা দরে ৮ শতক জমি কিনেছেন এক লাখ ৬০ হাজার টাকায়। সেই জমি নিবন্ধন করাতে তার খরচ হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। যা জমির দামেরও বেশি।
ফটিকছড়ি সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় জমি নিবন্ধনের খরচ জমির শতক প্রতি গড় দামের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেশি।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সদস্য মুহাম্মদ রাশেদ সুজন বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় পূর্ব-ফরহাদাবাদ মৌজার প্রতি শতক জমির গড় দাম নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ১ হাজার ৭৬১ টাকা। অথচ ওই এলাকায় কোন কোন স্থানে এক শতক জমির বাজারদর ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং মৌজার এক শতক জমির গড় দাম সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬৮ টাকা। অথচ সেখানে এক শতকের বাজারদর এক লাখ থেকে চার লাখ টাকা। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার সবগুলো মৌজায় জমির সরকার-নির্ধারিত গড় দাম বাজারদরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তাই ওই সব এলাকার অনেকে জমি বেচাকেনা করলেও অতিরিক্ত খরচের ভয়ে তা নিবন্ধন করাতে চান না। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পূর্ব-ফরহাদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, গত ২২ নভেম্বর নিজ গ্রামে তিনি ৫০ হাজার টাকায় এক শতক জমি কিনেছেন। ওই জমি নিবন্ধনে তার প্রায় ২৫ হাজার টাকা লেগেছে। তিনি বলেন, নিবন্ধন খরচ এত বেশি জানলে জমিই কিনতাম না।
সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর এলাকার বিক্রি হওয়া জমির মোট দামের গড় করে পরবর্তী বছরের জমির দাম নির্ধারণ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রেতারা বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে প্রকৃত দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দেখিয়ে জমি নিবন্ধন করান। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জমির দাম কাগজপত্রে কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার এটি অন্যতম কারণ। এতে নিবন্ধন খরচও পড়ে বেশি।
ফটিকছড়ি সদরের সাব-রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ফটিকছড়িতে ইদানিংকালে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখানকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকার জমির দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ জমির দাম তেমন বাড়েনি। জমিজমা কেনাবেচায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে এ বিষয়ে আমার বরাবরে একটি লিখিত আবেদন দিলে তা আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।