ফটিকছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

6

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি

ফটিকছড়ির বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় হালদা নদী ও ধুরুং, লেলাং, মানাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি, সর্তা ও তেলপারাই খালের পানি কমতে শুরু করেছে। কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এসব নদী ও খালের পাড় একাধিক স্থানে ভেঙে পানি ঢুকে ফটিকছড়ির বাগান বাজার, দাঁতমারা, নারায়নহাট, ভ‚জপুর, পাইন্দং, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, রোসাংগিরী, নানুপুর, লেলাং, বক্তপুর, ধর্মপুর, সমিতিরহাট, জাফতনগর, আব্দুল্লহপুর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এছাড়া ফটিকছড়ি পৌরসভা ও নাজিরহাট পৌরসভার নাজিরহাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা বন্যার কবলে পড়ে। এসব এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলাজুডে অনেক বীজতলা। ডুবে যায় বহু গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মৎস খামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। বন্যায় মাইজভান্ডার দরবার শরীফসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। বন্যার পানিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় গহিরা-হেঁয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক,কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজার, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দিনভর সেনাবাহিনীর একটি টিম নিয়ে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যাদুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলেন এবং উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান। তবে একাধিক প্লাবিত এলাকায় দেখা যায়, বানভাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিত্তবান থেকে শুরু করে সামাজিক সংগঠন। তারা কেউ কেউ বানভাসীদের শুকনা খাবার দিচ্ছেন আবার কেউ কেউ রান্না করা ভাত দিচ্ছেন। এদিকে বানভাসীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য শত শত গাড়ি করে ত্রাণ নিয়ে ফটিকছড়িতে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। আবার কেউ কেউ বোট নিয়েও এসেছেন উদ্ধার কাজ কিংবা বোটে করে বানভাসীদের নিকট ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার জন্য। এসব কাজে তাদের সহায়তা করছেন উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে নিখোঁজ দাঁতমারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডস্থ সাদিনগরের ভাড়াটিয়া হামিদের পুত্র সামি (১২) এবং ভূজপুরের ৭নং ওয়ার্ডের কবিরা পাড়া এলাকায় সুলতান আহমদের পুত্র রজি আহমদ নামে দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া নারায়ণহাট ইউনিয়নের মির্জারহাটে পানিতে ভেসে যাওয়া ইমরানকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইমরান ওই ইউনিয়নের ইদিলপুর এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে।
সুন্দরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল আজম বলেন, আমার ইউনিয়নে বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়। গতকাল থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে বোটে করে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। এদিকে ফটিকছড়ি বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বানভাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক সরোয়ার আলমগীর।
উপজেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প অফিসার আবুল হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলা ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা বোট দিয়ে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার, নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। যারা শুকনা খাবার বিক্ষিপ্তভাবে বিতরণ করছেন তারা সেটা না করে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে পারেন বলে জানান তিনি।