ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করে পাহাড় কেটে বিশাল এক পুকুর ভরাটের অভিযোগ ওঠেছে। এতে ওই এলাকার পরিবেশ হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া আসছে বর্ষায় এলাকাটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে বলে জানিয়েছে ওই এলাকার সচেতন মহল।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজার থেকে রাঙ্গাপানি চা-বাগানে যাওয়ার পথে হাতের ডানে ৩০০ ফুট গেলেই বিশাল এক পাহাড়। সেখানে একাধিক এক্সকেভেটর ব্যবহার করে শ্রমিক দিয়ে নির্বিচারে পাহাড়টি চেয়ারম্যনের নির্দেশে স্থানীয় বাসিন্দা বদি সওদাগরের নেতৃত্বে কাটা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকটা কেটে সাবাড়ও করে ফেলেছেন। অুনমতি ছাড়াই ইউপি ভবন সম্প্রসারণের নামে পাহাড়টি কেটে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। খবর সিভয়েস এর।
জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান বদি সওদাগর। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। শেষে তিনি বিরক্তিবোধ করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৪ (১) ধারা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর যদি মনে করেন কোনো কার্যক্রম পরিবেশ বিধ্বংসী, সেক্ষেত্রে যেকোনো কার্যক্রমকে নিষেধ করতে পারবেন। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অপেক্ষাকৃত উচু পাহাড়-টিলা জায়গা কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, পানির উৎস জলাধার-পুকুর ভরাটও নিষিদ্ধ।
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের কোন অনুমোদন ছাড়াই প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা এবং পুকুর ভরাট করলেও চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকায় খুবই ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠেছেন চেয়ারম্যান ইকবাল চৌধুরী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সবকিছুই তিনি করছেন। ইউপি ভবন বানাতে ভরাট হচ্ছে বিশাল এক পুকুর। এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করে কাটা হচ্ছে পাহাড়। আইনের কোনো তোয়াক্কা করছেন না। প্রকাশ্যে এক্সকেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মাটিগুলো স্থানীয় ভিটি এবং পুকুর ভরাটের জন্য নিতে দিচ্ছেন তিনি।
মো. নাজিম উদ্দিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশে এসব মাটি কাটা হচ্ছে। তিনি এখানে কয়েকজন মাটিয়াল ঠিক করেছেন। দৈনিক কামলা হিসেবে কাজ করছি। দিন শেষে সবাই পারিশ্রমিক নিচ্ছি।’
পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতিকর কোন কাজ আমি করছি না। ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব পাহাড় কাটছি সম্প্রসারিত ইউপি ভবন নির্মার্ণের জন্য। এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য পাহাড় কাটাতো অপরাধ নয়। বিষয়টি ইউএনও’র নলেজেও দিয়েছি।’
উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এমএস আকাশ বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পানি-নিষ্কাশন ও অগ্নিকান্ড মোকাবিলায় গুরুত্ব রাখে পুকুর। ভরাটে পানির উৎস নষ্ট হওয়ায় অগ্নিকান্ড মোকাবিলায় দুঃসাধ্য হয়।’
তিনি বলেন, ‘পুকুর বা জলাধার বেশি থাকলে আর্দ্রতা বেশি থাকবে। ফলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রিত এবং এলাকার তাপমাত্রা কম থাকবে।’ তিনি দাবী করেন, পুকুর অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া ও কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভরাট করা যায় না। ভরাট-শ্রেণি পরিবর্তন আইনের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড় কাটা এবং পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানি না। এমনটি হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি দ্রুত সরেজমিন দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য অধিদফতরের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। যে কোন স্থানে পাহাড় কাটার কোনো নিয়ম নেই। পাহাড় কাটা আইনগত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুকুর ভরাটও নিষিদ্ধ। বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকেই শুনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’