ফজলুর রহমানের বক্তব্য ‘একেবারেই ব্যক্তিগত’

17

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য দখল বিষয়ে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকান্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান আ ল ম ফজলুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিকে একেবারেই তার ‘ব্যক্তিগত’ বলে অভিহিত করেছে সরকার। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের ওই বক্তব্য ঘিরে ভারতে ব্যাপক তোলপাড়ের মধ্যে শুক্রবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
আগের দিন বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও তার ওই বক্তব্যকে ব্যক্তিগত হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার এটা পরিষ্কার করতে চায়, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো সম্পূর্ণরূপে তার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে দেওয়া। এসব মন্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বা নীতির প্রতিফলন নয় এবং সে কারণে, সরকার কোনোভাবে এই বক্তব্যকে সমর্থন করে না, কিংবা প্রকাশও করে না’।
ফজলুর রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানকে না মেলানোর আহব্বানও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। খবর বিডিনিউজের
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বাংলাদেশ সব দেশের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখন্ডতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ভারতের সাত রাজ্য দখল নিয়ে ফজলুর রহমানের বক্তব্য আলোচনার জন্ম দেয়। ২৯ এপ্রিল এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করলে বাংলাদেশের উচিৎ হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য দখল করে নেয়া। এব্যাপারে চীনের সাথে যৌথ সামরিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করি’।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তার এ বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। ওই খবরগুলোতে ফজলুর রহমানকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য নিয়ে চীনে সফরে মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকেও টানা হয়েছে ওই সংবাদগুলোতে। ২৮ মার্চ বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভারতের সাত রাজ্য, ভারতের পূর্বাঞ্চলে, যেগুলোকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়ে থাকে- ভারতের ভূবেষ্টিত অঞ্চল। সমুদ্রে যাওয়ার কোনো উপায় তাদের নেই। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক আমরা।
‘ফলে, এটা বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এটা চীনের অর্থনৈতিক বর্ধিতাংশ হতে পারে। বিভিন্ন জিনিস নির্মাণ, উৎপাদন করুন, বাজারজাত করুন; জিনিসপত্র চীন নিয়ে আসুন কিংবা সারাবিশ্বে পাঠিয়ে দিন’।
মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য ঘিরে ভারতের রীতিমত হৈ চৈ শুরু হওয়ার তার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের এমন কথা ‘প্রথম’ নয়; আর ওই বক্তব্য ছিল ‘সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
সরকার দূরত্ব বজায় রাখলেও থামছেন না তিনি
ভারতের সাত রাজ্য দখল নিয়ে ফজলুর রহমানের বক্তব্য ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার এটিকে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য হিসেবে অভিহিত করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের মত তিনিও বলেছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কোনোভাবেই একমত পোষণ করে না অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সম্মান করে।
সরকারের এমন বক্তব্যের পরও ফেসবুকে আরও দু’টি পোস্ট দিয়ে নিজের আগের বক্তব্য বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেন আ ল ম ফজলুর রহমান।
সেনা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক থাকার সময়ে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তের বড়াইবাড়ি গ্রামে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই সংঘর্ষে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ’’র ১৬ জন সৈন্য নিহত হয় এবং তৎকালীন বিডিআরের ২ জন সৈন্য নিহত হয়।