নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল (সাবেক সিবিএ) এর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, প্রেস সচিবকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ও সিসিটি টার্মিনালের বিষয়ে সুস্পষ্ট করতে হবে। কোনভাবেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনা ছেড়ে দেওয়া যাবে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল (সাবেক সিবিএ)’র কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে গত রবিবার রাজধানীর পল্টনে পুঁজিবাজার প্রতিবেদকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত এক সংলাপে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা এমন বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, যেন আমরা বন্দর কাউকে দিয়ে দিচ্ছি। বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। চট্টগ্রাম বন্দর আমরা কাউকে দিচ্ছি না, সংস্কার করতে চাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত যেকোন স্থাপনা বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল (সাবেক সিবিএ) বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ মে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৫ মে বন্দর ভবনের মেইন গেটে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। আমরা মনে করি আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা বিবেচনা করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দিচ্ছি না মর্মে বক্তব্য প্রদান করেন।
শ্রমিক নেতা হুমায়ুন কবির আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছেন। আমরা এই বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই তবে সেটা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর এবং বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সিসিটি, এনসিটি সহ কোন স্থাপনায় বিনিয়োগের নামে ইজারা প্রদান মেনে নেয়া হবে না। আমরা এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট বক্তব্য প্রদানের জন্য সরকারের কাছে এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই।
তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি সরকারের গোচরীভূত হয়েছে এবং জনস্বার্থে ঈদে নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে আপাতত কোন কর্মসূচি থাকছে না। তবে সরকার বা বন্দর কর্তৃপক্ষ সিসিটি, এনসিটি বেসরকারীকরণ কিংবা ইজারা প্রদানের প্রক্রিয়া থেকে বিরত না থাকে তাহলে পুনরায় আমরা আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
সভায় বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব টাকায় নির্মিত টার্মিনাল পিসিটি সৌদি আরব ভিত্তিক কোম্পানি আরএসজিটিকে ২২ বছর মেয়াদে ইজারা প্রদান করা হলেও তারা ইতিমধ্যে সক্ষমতার মাত্র ১২ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ বার্থিং জোয়ার ভাটার সাথে জড়িত, কর্ণফুলী চ্যানেলের নাব্যতার বিষয় রয়েছে। তাই বিশ্বের কোন বড় কোম্পানি চাইলেই এখানে বড় জাহাজ বার্থিং করতে পারবে না। এনসিটি একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ টার্মিনাল, এখানে বিনিয়োগের কি আছে? আমরা চাই এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হোক। তাই অনতিবিলম্বে জনবল কাঠামো তৈরি করে জনবল নিয়োগ করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হোক। সাইফ পাওয়ার টেক একটি মাফিয়া গোষ্ঠী তাদের অতীতের দুর্নীতি ও অপকর্মের দায়ে কালো তালিকাভূক্ত করার জোর দাবি জানানো হয়। আর যদি সাময়িক সময়ের জন্য কোন অপারেটর নিয়োগের প্রয়োজন পড়ে তাহলে দরপত্রের শর্তাবলী শিথিল করে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগের দাবিও জানান শ্রমিক নেতারা।
এসময় চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক দল (সাবেক সিবিএ) এর সহ-সম্পাদক মোজাহের হোসেন শওকত, ডক বন্দর অঞ্চল শ্রমিক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সাইদ হারুন, মার্চেন্ট শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি মো. হোসাইন, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন রেজা রাজু, বিভাগীয় শ্রমিক দল নেতা আনোয়ারুল আজিম রিংকু ও সিরাজুল ইসলাম, বন্দর শ্রমিকদল নেতা মো. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।