নিজস্ব প্রতিবেদক
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী ৪০তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল সোমবার চতুর্থ দিনে বক্তারা বলেন, খোলাফায়ে রাশেদা ও সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবী (দ.) ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) প্রতি শর্তহীন আনুগত্য ও অসামান্য ভালোবাসা দেখিয়েছেন। তেমনি ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) প্রিয় নবীর (দ.) প্রতি যে অকৃত্রিম মহব্বত ও আনুগত্য দেখিয়েছেন দুনিয়ার ইতিহাসে তা অতুলনীয়। তিনি প্রিয় নবীর (দ.) খেদমতে ও ইসলামের প্রচার প্রসারে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
বক্তারা বলেন, হিজরতের বহুদিন আগে একদিন প্রিয় নবী (দ.) হযরত আবু বকরকে (রা.) বলেছিলেন, তিনি মদিনায় হিজরত করবেন। কখন কোন সময় প্রিয় নবীর (দ.) সঙ্গে হিজরতের ডাক আসতে পারে তা ভেবে দীর্ঘদিন ধরে রাতেও ঘুমাননি হযরত আবু বকর (রা.)। এই হচ্ছে সিদ্দিকে আকবরের (রা.) নবীপ্রেম। গতকালের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মশুরিখোলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে ত্বরিকত আল্লামা শাহ আহছানুজ্জামান।
তিনি বলেন, অন্যায় অসত্য ও জুলুমতন্ত্রের সঙ্গে আপস না করাই ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদাতের দর্শন ও শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের আন্তর্জাতিক কারবালা মাহফিল আমাদের ঈমানি জজবা চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ¦ স‚ফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি হযরত মাওলা আলী (রা.) এর বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, জালিম নিপীড়ক শাসক, লোভী রাজনীতিবিদ, অসৎ ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিবাজ বিচারক এরাই দেশ ও সমাজে বিপর্যয় ডেকে আনে। এরা দুর্নীতিগ্রস্ত হলে কে ধরবে দেশের হাল। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ক্ষমতা চাননি। চেয়েছিলেন ন্যায়ভিত্তিক শাসন। এজন্য তিনি ইয়াজিদি দুঃশাসন রুখে দিয়েছিলেন। হিংসা, লোভ, অহংকার এবং ক্ষমতার দম্ভ পরিহার করে জনপ্রত্যাশার আলোকে জনগণের জন্য আজ করাই হচ্ছে ইমাম হোসাইনের (রা.) শাহাদাতের দর্শন। খতিবে বাঙাল আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরী (র.) আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল প্রবর্তন করে আমাদেরকে ঈমানি নিয়ামত ও দৌলত দিয়ে ধন্য করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তাফদিলুস শায়খাইন ও হুব্বুল খতনাইন এর ব্যাখ্যা বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা দারুল উলুম আহমদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা কাযী আবু জাফর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, হযরত আবু বকর (রা.), হযরত ওমর (রা.) এবং হযরত ইমাম হাসান (রা.) ও হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)সহ সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) শান মর্যাদা সমুন্নত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক।
ওয়াতাসিমু বিহাবলিল্লাহ এর সঠিক ব্যাখ্যা কী বিষয়ে আলোচনা করেন হালিশহর মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল এর অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি। তিনি বলেন, মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস আজ জালিম ইহুদিদের হাতে অবরুদ্ধ। এজন দায়ী মুসলিম দেশের শাসকদের অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর নবীপ্রেম বিষয়ে আলোচনা করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ফকিহ আল্লামা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রিজভি। তিনি বলেন, সিদ্দিকে আকবর (রা.) এর নবীপ্রেম ইশক মহব্বত অতুলনীয়। মাহফিলে অতিথি ছিলেন, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর আলহাজ্ব আলী হোসেন চৌধুরী, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের পরিচালক ড. সৈয়দ শাহ এমরান, আনজুমান ট্রাস্ট সদস্য মুহাম্মদ নুরুল আমিন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার গভার্নিং বডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মহসিন মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, জামেয়ার প্রভাষক আল্লামা গোলাম মুস্তফা মুহাম্মদ নূর নবী।
যুব সমাজের মধ্যে নবীপ্রেম সৃষ্টিতে আমাদের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার মুদাররিছ আল্লামা মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, যুব সমাজ দেশের জন্য বড় আশীর্বাদ হতে পারে। তাদের মাঝে নবীপ্রেম জাগ্রত করতে এই মাহফিল বিশেষ ভ‚মিকা রাখছে। মাহফিলে কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন কারী মুহাম্মদ ইব্রাহিম। না’তে রাসুল (দ.) পরিবেশন করেন মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বাঁধন।
ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ মাওলানা আহমদুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আলহাজ¦ খোরশেদুর রহমান, আলহাজ¦ মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, প্রফেসর কামাল উদ্দীন আহমদসহ বিভিন্ন দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন, বিভিন্ন দরবারের মোতোয়াল্লী, বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্দ। সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়।