নিজস্ব প্রতিবেদক
‘চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। এখন গুরুত্বপূর্ণ এই তিন পদ শূন্য রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ট্রাস্টিবোর্ড গঠনের জন্য ‘মুখিয়ে’ আছে প্রতিষ্ঠাতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি চসিকের সম্পত্তি হিসেবে চিঠি পেলেই কাজ শুরু করা হবে। একই সঙ্গে সম্পত্তি বুঝে নিয়েই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজাতেও প্রস্তুত চসিক’।
গতকাল মঙ্গলবার চসিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
চসিকের ন্যায্য হিস্যা আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরে পাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব টাকায় তৈরি; তাই এটা চসিকেরই সম্পত্তি। এটা পাওয়ার জন্য চসিকের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি সব জায়গায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। নিয়মানুসারে- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সবশেষ আপডেট হচ্ছে চসিকের পক্ষেই রায় এসেছে। কোর্টে যেটা নিষেধাজ্ঞা আছে সেটার জন্য আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়েছি। বাকি সবকিছু চসিকের পক্ষেই আছে। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করি। চসিকের ন্যায্য যে হিস্যা, চসিকের যে সম্পত্তি মাফিয়া চক্র দখল করেছিল; সেটা আবারো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং যথাযোগ্যভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসির মাধ্যমে সেটা ফিরে পাব। একটু সময়ের ব্যাপার মাত্র’।
মেয়র বলেন, আমরা এখন অপেক্ষা করছি- শিক্ষা মন্ত্রণালয় বুঝিয়ে দিবে যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চসিকের সম্পত্তি। ওই পর্যন্ত আমরা ধৈর্য ধরছি। চিঠিটা পেয়ে গেলে চসিকের এই সম্পত্তি বুঝে নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ শুরু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাদের চিন্তা করা হচ্ছে; তারা অত্যন্ত দক্ষ এবং বিজ্ঞ। ওই ধরনের লোক আনতে চাই যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে কেউ এটা পরিচালনা করুক। ভাবমূর্তি নষ্ট হবে- এমন কাউকে পরিচালনার দায়িত্বে রাখতে চাই না। প্রফেশনালিজম বোর্ডের মাধ্যমে সেটা হবে। একইসঙ্গে কোনো পরিবারতন্ত্র এবং মাফিয়া চক্রের হাতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধক দেওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।
চসিক বুঝে পাওয়ার পর নিয়ম জারির কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চসিক বুঝে পেলেই সেখানে এমন নিয়ম জারি করা হবে। যাতে কোনো মেয়র নিজের সম্পত্তি হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় আর কোনোদিন করায়ত্ত করতে না পারে। এ আইনটা সেখানে রাখা হবে। নিজের সম্পত্তি যাতে করতে না পারে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৫ হাজার শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করেছে। তাদের অনেকের অভিভাবক চসিকে এসেছে, আমার বাসায় গিয়েছে। তারা খুব উৎকুণ্ঠিত। তাৎক্ষণিকভাবে বলেছি, এটা যেহেতু চসিকের সম্পত্তি; এটা সিটি কর্পোরেশনই দেখবে।
চসিকের সম্পত্তি পরিবারতান্ত্রিক করে নিজস্ব ট্রাস্টিবোর্ড গঠনের মাধ্যমে দখল করা হয়েছে মন্তব্য করে ডা. শাহাদাত বলেন, প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী; যখন মেয়র ছিলেন ২০০১ সালে থেকে এবং সেটা ১৯৯২ সালের আইনে ৫ কোটি সেখানে জমা দিতে হয়। সিটি কর্পোরেশন সমস্ত আইন মেনে এবং ২০০৩ সালে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে এ জায়গাটা কিনে চসিকের অধীনে সেটা করেছে। এবং সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে এটি ১৬টি বছর পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাজনীতিবিদরা পরিবর্তীতে গিয়ে জনগণের কাক্সিক্ষত জায়গায় সেভাবে ক্লিক করতে পারেনি। নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখেছে; যেটা প্রিমিয়ারের ক্ষেত্রে হয়েছে। নিজের ক্ষমতা কাটিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে মাফিয়া কায়দায় ২০১৬ সালের পরে একটি পরিবারতান্ত্রিক করে দখল করা হয়েছে। কোনো রাজনীতিবিদের নাম ধরতে চাই না। কারণ, কারা করেছে সেটা আপনারা জানেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরতদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা অনেকদিন সেখানে নিষ্পেষিত ছিল। অনেক শিক্ষক প্রমোশন পাননি। অনেক ছাত্র নিগৃহীত ছিল। তাই তারা আন্দোলন করেছে। এক পর্যায়ে উপাচার্য, প্রক্টর পদত্যাগ করেছে। যারা আন্দোলন করেছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে সবকিছু ৫ আগস্টের পরবর্তী নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। এর মধ্যে যদি আবারো কোনো অনিয়ম করতে চাই, মাফিয়া চক্রের হাতে পড়ে যায়; তাহলে অর্জিত যেই স্বাধীনতা সেটা বিফল হয়ে যাবে। তাই সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। আইনের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না। আইন আইনের গতিতে চলবে।