প্রার্থী নিয়ে হিসাবের গরমিল

20

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রামের ছয়টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। দলের অভ্যন্তরে কোন্দল, সমঝোতা করতে না পারা, প্রার্থী নির্বাচন বা বাছাইয়ে হিসাব-নিকাশে গরমিল এবং আন্দোলনে মিত্র দল বা জোটের দাবিসহ নানা কারণে এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায়নি। এতে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও কৌতুহল তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে তৃণমূলের মাঝে পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়নপ্রাপ্তি নিয়ে অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
গত সোমবার বিএনপি চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর বাকি ছয় আসন নিয়ে চলছে অনুসন্ধান, মতামত গ্রহণ এবং সংঘাত নিরসনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা। প্রার্থী ঘোষণা না করা ছয়টি আসন হচ্ছে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)।
দলীয় সূত্র মতে, এই ছয়টি আসন চট্টগ্রামে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। ভুল সিদ্ধান্ত হলে শুধু নির্বাচনী ক্ষতি নয়, বিএনপির আগামী দিনের সাংগঠনিক ভিত্তিও দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সতর্কতা থেকেই কেন্দ্র সযত্নে প্রার্থী বাছাইয়ে সময় নিচ্ছে।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, কিছু জায়গায় আমরা সমঝোতা করতে পারিনি, সেগুলোতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি। আমরা তো বড় দল, সব জায়গায় একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী আছেন। চট্টগ্রামের যে ছয়টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি, সেগুলো তো আমাদের আসন। এতগুলো আসন তো আর জোটের জন্য ছেড়ে দিবে না। হয়তো একটা জোটের জন্য ছেড়ে দিলেও দিতে পারে। বাকিগুলোতে কথা বলে কিছুদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী দেওয়া হবে।

সন্দ্বীপে চার প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ : চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে চার প্রার্থী সক্রিয় রয়েছেন প্রচারণায়। সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা, সাবেক যুগ্ম আহব্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান ও তরিকুল আলম মনোনয়ন প্রত্যাশী। সবাই নিজস্ব কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। বহুপাক্ষিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও বিভক্তির কারণে এখানে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।

রাউজানে ‘রক্তাক্ত’ দ্বন্দ্ব : চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে ইতিমধ্যে রক্তপাতের সংঘাতে জড়িয়েছে বিএনপির দুপক্ষ। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহব্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় তীব্র রূপ নেয়। ওই সময় থেকে রাউজানে ১৪টি খুনের ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে ছয়টি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। এ আসনে যেকোনো পক্ষকে মনোনয়ন দিলে ‘রক্তপাত’ নতুন করে শুরু হওয়ার আশঙ্কায় প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে বিএনপি।

কোতোয়ালীতে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী : চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী একাধিক, তাই প্রার্থী বাছাইয়ের হিসাব জটিল হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সারিতে আছেন সাবেক মহানগর বিএনপির সভাপতি ও চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সাবেক যুগ্ম আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান ও শামসুল আলম। যদিও সোমবার প্রার্থী ঘোষণার সময় এই আসনে আবু সুফিয়ানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে একটু পরেই আসনটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত আসনটিতে সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে।

বন্দর-পতেঙ্গায় আলোচনায় খসরু পরিবার : চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) এলাকায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইস্রাফিল খসরু দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয়। আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনীত হয়েছেন। তাই ছেলে চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে। নগর বিএনপির সদস্য সচিবও প্রার্থী তালিকায় থাকতে পারেন- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে গুঞ্জন রয়েছে।

চন্দনাইশ-সাতকানিয়ায় অলির প্রভাব : চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা বা মিত্র দলের হাতে চলে যেতে পারে। তাই নজর এলডিপির দিকেই। এলডিপির সাথে সমঝোতা হলে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। অন্যদিকে এলডিপির পক্ষ থেকে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের ছেলে ওমর সানিকে এ আসনটিতে প্রার্থী করার কথা রয়েছে।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় ত্রিমুখি হিসাব : চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী তুলনামূলক কম। আসনটিতে শক্তিশালী অবস্থানে আছে জামায়াত। সমঝোতা হলে এই আসনটিও এলডিপিকে ছেড়ে দিতে পারে, এমন কথা শোনা যাচ্ছে। আসনটিতে এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ নির্বাচন করতে পারেন। ফলে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া দুটি আসনে প্রার্থী দিতে পারে এলডিপি। আবার এনসিপির সাথে সমঝোতা হলে পাল্টে যেতে পারে এ হিসাব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানান, মিত্র দলগুলোর বাইরেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও কয়েকটি ইসলামপন্থী দলের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব দলের সমঝোতা না হওয়া, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন না হওয়া এবং মাঠপরিস্থিতির নানা কারণে এসব আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।