প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন না হলে কোনো লাভ নেই : সাখাওয়াত

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

পাঁচ টাকার বেশি টোল নিলেই ইজারা বাতিল করা হবে। তবে ইজারা প্রথা বদলাতে গিয়ে মামলায় পড়তে হচ্ছে। মামলাগুলো শেষ হলে, একটা প্রক্রিয়ায় যাবে সরকার। একই ব্যক্তি বারবার, জীবনভর ইজারা নেবে, এসব চেঞ্জ করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে নুনিয়ারছড়ার বিআইডবিøউটি এর ঘাট থেকে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধনের সময় চিন্তক ও গবেষক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন। তিনি মহেশখালীর সন্তান। পরে সি-ট্রাকে চড়ে মহেশখালীতে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এই পথে আরও একটি সি-ট্রাক ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেন তিনি। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের যদি উন্নয়ন না হয়, তাহলে ঢাকায় মেট্রোরেলে চড়ে কোনো লাভ নেই। উন্নয়ন করতে চাই কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে যে মামলা করা হয়, তাতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়’। খবর বিডিনিউজের
এ সময় বরিশাল এবং মহেশখালীর মানুষকে মামলাবাজ বলেও অভিহিত করেন তিনি।সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মহেশখালীতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, নতুন রাস্তাঘাট হয়েছে, মাতারবাড়িতে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু গেল ২০ বছরে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে কোনো উন্নয়ন হয়নি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে মহেশখলীবাসীর জন্য। একটা নিরাপদ নৌযান সি-ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়েছে কিন্তু সকল সমস্যার সমাধান হয়নি’।
তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে তৎকালীন সচিব মোকাম্মেল হক সাহেব মহেশখালী ঘাটের টোল তুলে দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, দুর্যোগপূর্ণ এলাকার দরিদ্র মানুষের টোল নেওয়ার প্রয়োজন নেই; যা বহুদিন কার্যকর ছিল। কিন্তু এখন নানারকম ছলে এবং প্রয়োজনে একবার পৌরসভার জন্য, একবার জেলা পরিষদের নামে টোল তোলা হচ্ছে। আমরা মনে করি আপনারা দাবি তুললে এটা বাতিল হতে পারে’।
অতীতে মহেশখালীবাসীর দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজা উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষায় উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে কাঠের নৌকা, লোহার গামবোট ও স্পিডবোটে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করতে হত। এই যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ করত প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট; যারা যাত্রীদের নানাভাবে জিম্মি করে রাখত। নতুন সি-ট্রাক চালু হওয়ায় সেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমবে বলে আশা করি’।
এ সময় বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বিআইডবিøউটিসি’র চেয়ারম্যান মো. সলিমুল্লাহ, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন এবং পুলিশ সুপার সাইফউদ্দীন শাহীনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার থেকে মহেশখালী প্রতিদিন তিনবার করে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার সি-ট্রাকটি যাওয়া-আসা করবে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা, দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬ টায় মহেশখালীর উদ্দেশ্যে সি-ট্রাক ছেড়ে যাবে।
এ ছাড়া মহেশখালী থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা, বেলা ১১টা এবং বিকাল ৫ টায় সি-ট্রাক ছাড়বে।
বিআইডবিøউটিএয়ের কক্সবাজার নদীবন্দর (কস্তুরাঘাট) শাখার সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, আপাতত প্রতিদিন তিনবার করে সি-ট্রাক চলাচল করবে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া মহেশখালী থেকে কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাটে ৩৫ টাকা এবং নুনিয়ারছড়া ঘাটে ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সি-ট্রাক সেবা চালুর খবরে দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ও আনন্দের জোয়ার বইছে। শাপলাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ মানিক বলেন, অতীতে কোনো রাজনৈতিক দল এই ঘাট নিয়ে কিছুই করতে পারেনি, সিন্ডিকেট লালন পালন করেছে। ভবিষ্যতে এসব আর হবে না বলে প্রত্যাশা তার।