পারভীন আকতার
আমাদের দেশের বিজ্ঞজনেরা প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কতো দোষ ধরেন তারা বাংলা রিডিং ঠিক মতো পড়তে পারে না। ইংরেজি আর গণিতের কথা তো আর নাই বা বললাম। কিন্তু তারা নূন্যতম যোগ্যতায় হলেও পাস করেই উচ্চ বিদ্যালয়ে যায় বলেই আপনারা শিক্ষার্থী পান। ফের হাই স্কুল থেকে কলেজ তারপর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাথমিকে তো বেইসলাইন তৈরি করা হয় কিন্তু তার উপর শক্ত পিলার কে বা কাহারা তৈরি করার দায়িত্বটি বাকী পাঁচ সাত বছর পালন করেন সবিনয়ে তা জানতে চান প্রাথমিকের শিক্ষকগণ ও সুশীল সমাজ।
প্রাথমিকের শিক্ষার প্রধন প্রোডাক্টটি হলো শিশু। বাকী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এই শিশু থেকে কিশোর যুবক যুবাদের মতো ভাগ্যবানদের পড়ানোর সুযোগ পান। এরপরও কম বেশি সবাই বলেন প্রাথমিকে পড়ালেখা নাই। সব টাকা অপচয়। কত টাকা বেসিক, টিফিন,বাড়ী ভাড়া,চিকিৎসা খরচা দেয় প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারের কাছ থেকে জেনে নেবেন দয়া করে। কেমন মানবেতর জীবনযাপন করেন শিক্ষকগণ সেই তথ্যাদিও মাঠ পর্যায়ে ঘুরে ঘুরে নিতে পারেন। ঋণের ভারে জর্জরিত প্রায় সব শিক্ষক। আর এখন এইচএসসিতে এতো অকৃতকার্য হলো এটা কার দোষ? স্যোসাল মিডিয়া থেকে টক শো তে যেভাবে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে নাক ছিটকানি হয়,কই এখনতো সেই রকম উচ্চবাচ্য কিছু দেখি না কোথাও। যত দোষ নন্দ ঘোষ সেই প্রাথমিকের দশ বছর পর্যন্ত অবুঝ,অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের শিক্ষকদের ঘাড়ে। উন্নত বিশ্বে প্রাথমিকে আনুষ্ঠানিক পড়ালেখার উপর কোন জোর নাই। এরা শেখায় শিশুকে নীতিনৈতিকতা আর করে মানসিক পরিচর্যা ভবিষ্যতের জন্য। আর এই দেশে ঠিক তার উল্টো। এ দেশে লেখা পড়ার ধরনই হলো অল্প বয়সেই শিশুকে ইঁচড়েপাকা বানানোর ধান্দা, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া, পরীক্ষার যাঁতাকলে ফেলে মানসিক বিকাশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া। তো তারা ফেল করবে না তো কারা ফেল করবে বলুন।
গ্রামের তৃণমূল পযার্য়ের অপেক্ষাকৃত গরীব অসহায় ঘরের সন্তানদের আমরা পড়াই যারা দু’বেলা ভালো মতো খেতেও পারে না। ভালো পোশাক আশাক নেই। বাবা বেকার কিংবা কোনরকম ডাল ভাত খাওয়ার মতো রোজগার। সংসার ঠিক মতো চলে না। সারাক্ষণ অভাবের তাড়নায় ঘরে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। এখন বলেন সেই সন্তান কী স্বপ্ন দেখে স্কুলে আসবে? কী পড়বে অভুক্ত শরীরে? কত কোটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে তা কেউ দেখার মতো আছে? মন কি তখন কাজ করে বলে মনে করেন পড়ালেখার মতো নিগূঢ় গভীর একটা মন মস্তিষ্কের বিষয়ে?
বাংলাদেশে শিশুদের নিয়ে কীসের গবেষণা হয় আমি ঠিক জানি না আসলে। আর তার বাস্তবায়নও কী কী, কতটুকু তা সবাই জানেন ও বুঝেন। বেশিরভাগই দেখা যায় আইওয়াশ। প্রকৃত পক্ষে যদি কিছু করতে চান তাহলে বাংলাদেশের আনাচকানােেচর গরীবের ঘরগুলোতে আগে উপযুক্ত পবিবেশ, খাওয়া দাওয়া এবং ইনকামের সুযোগ তৈরি করে দিন। না খেয়ে যেন তাদের সন্তানরা স্কুলে না আসে। রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের খাওয়া পরা, স্বাস্থ্য চিকিৎসা পড়ালেখার দায়িত্ব নিক। ভিক্ষা নয় এ তার মৌলিক অধিকার। উচিত কথা, খ্ুঁত ধরে ধরে কোন রাষ্ট্র কোন মানুষের জীবনমান পার করে দিতে পারে না কোনমতেই। আজকে হচ্ছে আর হবে করে করে দেখলাম বুড়ো বয়সেও একজন শিক্ষকের প্রমোশনই হলো না।শিশুদের জীবনেরলথা আর কে বা ভাবে?
মাঠ পর্যায়ের তথ্য ও তত্তে¡র নির্ভর করে বসে বসে এসি রুমে কলম না ঘুরিয়ে বরং মাথা খাটান,মেধার জোর দেখান। ফিল্ডে আসুন একটা বাংলা না পারা শিক্ষার্থী কী কী জিমিসের অভাবের কারণে তার ভিতর মেধার দুয়ার খুলছে না লক হয়ে আছে তার মূল সমস্যাটা খুঁজে বের করুন। কেবল শিক্ষকদের দোষ দিয়ে দায় সারবেন না দয়া করে। এ মহা অন্যায় ও শিক্ষকদের অবিচার করা। সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত সারাদিন কোন শিক্ষক গা এলিয়ে বসে থাকে না নিশ্চয়। আপনারা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দূরবীন দিয়ে শিক্ষার মূল প্রোডাক্ট শিশুদের এভাবে দেখবেন না দয়া করে। একটি শিশুর পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দিন। ইভটিজিং ও ধর্ষণের হাত থেকে তাদের দয়া করে বাঁচান। পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে সহায়তা করে পারিবারিক শান্তির জায়গাটুকু করে দিন।পড়ালেখার শান্ত পরিবেশ তৈরি করে দিন। তারপর দেখুন তারা ফড়ফড় করে শুধু বাংলা নয় ইংরেজি গণিত সব পারছে।
বর্তমান পাঠ্যবইয়ের প্রচুর সংস্কার দরকার। সহজ থেকে কঠিন আর কঠিক থেকে সহজে কিভাবে পড়ালেখার ধাপগুলো অনুসরণ বইগুলো সাজানো যায় তৃণমূল পযার্য়ের বেশ কিছু দক্ষ শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, সমাজ বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের টিম গঠন করুন। ফাউ কতগুলো টাকা খাওয়া লোক নিয়োগ আর দিয়েন না। রিয়েলিটি বুঝে নেনে এবং মেনে নেন। লেখকের কলমের কালি শেষ হয়ে যায় কিন্তু রাষ্ট্রের সমস্যাগুলো আরো বৃহৎ আকারে অজগর সাপ হয়,আগাছার মতো বাড়তেই থাকে। কে শুনে কার কথা তবুও আমরা শিক্ষক ও সচেতন নাগরিক হিসেবে বারংবার রাষ্ট্র ও জাতিকে তাগিদ দিয়ে যাবো যা একান্তই করণীয় ও আবশ্যকীয় উচিত কার্য বলে পরিগনিত হয় উন্নত সমাজ বিনির্মানে।
লেখক : শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক











