সৈয়দা ফাহমিদা সাত্তার
আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনিপুনভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি)’র গুরুত্ব অপরিসীম। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি)’র সরকার নির্ধারিত কতকগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এর বাইরেও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে বিদ্যালয়ের অবস্থান, অংশীজনদের পেশা, পরিবেশ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে বিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশের উন্নয়নে এক বা একাধিক ভূমিকা / উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তবে, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন কোনভাবেই সরকারের শিক্ষা নীতির পরিপন্থি না হয়। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) কে এমন এমন উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে যা সংশ্লিস্ট বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর ভর্তির হার বৃদ্ধি, উপস্থিতি বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার রোধকরণ, শিক্ষা চক্রের সমাপ্তির হার বৃদ্ধিকরণ, শিশুশ্রম রোধ ও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ এবং প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) যে সকল ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে পারে সে ক্ষেত্র গুলো হলো-স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (ঝখওচ) বাস্তবায়ন, একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন, বিদ্যালয় নির্মাণ, পুননির্মাণ ও সংস্কার কাজ পরিবীক্ষণ, প্রাথমিক শিক্ষায় দ্বিতীয় সুযোগ সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ, দুর্যোগকালীন অব্যাহত শিক্ষা, বিদ্যালয়ে ভর্তি ও উপস্থিত নিশ্চিত করা অন্যতম।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য :
১। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের উপর প্রতি বছর মে, আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের নিকট নির্ধাতির ছকে কমিটির সদস্য সচিব ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে প্রতিবেদন প্রেরণ।
২। ছাত্রছাত্রীর শারীরিক শাস্তি প্রদান পরিহার নিশ্চিত করণ।
৩। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যয়িত অর্থের হিসাব অনুমোদন করবে। এসএমসি কর্তৃক খরচের বিষয়টি অনুমোদিত না হলে অডিটে গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪। বিদ্যালয়ে শিক্ষকগণ কর্তৃক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সত্যনিষ্ঠা ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের বিষয়ে কমিটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
৫। কমিটির সকল সদস্য প্রতিমাসের শেষ কর্ম দিবসে বা নিকটবর্তী দিবসে পাঠদান কর্মসূচীর পরে অন্তঃত এক ঘন্টা ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ/সুপারিশ শ্রবণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ :
বিদ্যালয়েল সার্বিক উন্নয়নে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থানীয়ভাবে সম্পদ সংগ্রহ ও সদ্ব্যবহারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। সম্পদ বলতে জনসাধারণ কর্তৃক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে দানকৃত জমি, ভবন, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, শেখনশেখানো সামগ্রী, শিক্ষা উপকরণ নগদ অর্থ ইত্যাদি বোঝাবে। সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ প্রযোজ্য হবে:
ক) যে কোন ধরনের দান ও অনুদান গ্রহনের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক যথারীতি বিষয়টি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়মিত সভায় উপস্থাপন করে অনুমোদন গ্রহণ করবেন।
খ) স্থানীয় উদ্যোগে সংগৃহীত সম্পদ বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অবকাঠামোর উন্নয়ন যথাযথভাবে সম্পদ সংরক্ষণ ও তদারকি কার্যক্রম ব্যতীত অন্যকোন কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে না।
গ) স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবহারের জন্য পৃথক রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
ঘ) সংগৃহীত নগদ অর্থের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে তফসিলভুক্ত ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে হবে।
ঙ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রদানকৃত জমি বা বিদ্যালয় স্থানাস্তরের কারণে প্রাপ্ত জমি কর্তৃপক্ষের অনুকুলে রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদন ও নামজারী নিশ্চিত করতে হবে।
চ) ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মাঠ ও অন্যান্য স্থাপনা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে উপজেলা/থানা প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন গ্রহণ করতে হবে।
ছ) এলাকার কোন অধিবাসী বা কোন দানশীল ব্যক্তির উদ্যোগে বিদ্যালয় ভবন বা কক্ষ নির্মাণ করা হলে, কিংবা আসবাবপত্র বা অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হলে, সে সংক্রান্ত তথ্যাদি/তালিকা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রক্ষিত ফলকে/বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে।
জ) সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা/সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে সম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত হিসাব নিরীক্ষাপূর্বক স্বাক্ষর করবেন।
ঝ) এছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও উক্ত হিসাব ও রেজিস্ট্রার যাচাই করতে পারবেন।
বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (ঝখওচ)
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। কমিটি বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রণয়ন বাস্তবায়নের নির্দেশিকা’ অনুসরণ করবে। এক্ষেত্রে কমিটি নিম্নরূপ দায়িত্ব পালন করবে:
ক) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় শিখন শিখানো পরিবেশ সম্পর্কিত অবস্থা বিশ্লেষণ এবং সমস্যা চিহ্নিত করণ;
খ) উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ;
গ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কিত তহবিল পরিচালনা;
ঘ) স্থানীয় জনগণের নিকট থেকে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ; এবং
ঙ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকায় বর্ণিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন।
একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম :
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ক্যাচমেন্ট এলাকায় বিদ্যালয় গমনোপযোগী সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্টকরণ এবং সকল শিশুকে গুণগত শিক্ষা প্রদানে এসএমসি নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে:
ক) এলাকার বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুদের জরিপ কার্যক্রমের সহায়তা করণ;
খ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ক্যাচমেন্ট এলাকায় বিদ্যালয়গমোনপযোগী বিশেষ চাহিদা সম্পদন্ন শিশু চিহ্নিত করণ ও ভর্তিসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতা প্রদান, তাদের চাহিদা সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ এবং রেফারেল সার্ভিস প্রদানে সহযোগিতা প্রদান এবং
গ) একীভূত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রাপ্ত তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করণ।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা:
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনায় এসএমসি নি¤œরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে:
ক) প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পাঠদান কার্য তদারকীর করণে;
খ) প্রাথ-প্রাথমিক শিক্ষা শেষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে ধরে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
গ) প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শেখন ও শেখানোর সামগ্রী তৈরি ক্রয়ে সহায়তা প্রদান;
ঘ) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনার জন্য প্রাপ্ত তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করণ;
বিদ্যালয় নির্মাণ, পুননির্মাণ ও সংস্কার কাজ পরিবীক্ষণ:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ, পুননির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজের গুণগতমান চিহ্নিত করণে এসএমসির দায়িত্ব নিম্নরূপ:
ক) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বিদ্যালয় মেরামতে সার্বিক প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করে সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণসহ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত প্রস্তাব করবে।
খ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থের সংস্কার, মেরামত কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। ব্যবস্থাপনা কমিটি এক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তাবায়ন কমিটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে। ব্যবস্থাপনা কমিটি এরূপ মেরামত কাজের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটির নিকট হতে প্রশাসনিক অনুমোদন গ্রহণ করবে এবং মেরামত কাজের বাস্তব অগ্রগতি সম্পর্কে উপজেলা শিক্ষা কমিটির নিকট দায়বদ্ধ থাকবে। তবে স্থানীয় অনুদানের অর্থ দ্বারা মেরামত সংস্কার কাজের ক্ষেত্রে এ আর্থিক সীমা দুই লক্ষ প্রযোজ্য হবে না।
গ) সংস্কার মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের দর্শনীয় স্থানে ৬ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ফুট প্রস্থ মাপের একটি সাইনবোর্ডে বিদ্যালয়ের নাম, সংস্কার ও মেরামতের ধরণ, বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ,বরাদ্দ প্রাপ্তির তারিখ, কাজ শুরুর তারিখ, কাজ সমাপ্তির তারিখ ও সভাপতি ও সদস্য-সচিবের নাম সন্নিবেশনপূর্বক স্থাপন করবে।
ঘ) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ খাতের অর্থ উত্তোলনের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসাবে ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন। এবং বরাদ্দকৃত অর্থ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুকূলে অগ্রিম হিসাবে প্রদান করবেন।
ঙ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন ক্রমে সদস্য সচিব (প্রধান শিক্ষক ) অর্থ উত্তোলন ও ব্যয় করবেন।
চ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি উক্ত অর্থ ব্যয়ের বিল/ভাউচার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় কার্যবিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করবেন। উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যালয় পরিদর্শন করে মেরামত কাজ সন্তোষজনক কিনা সে সম্পর্কে প্রত্যয়ন করবেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উক্ত প্রত্যয়সহ প্রাপ্ত বিল ভাউচার ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার কার্য বিবরণী শিক্ষা কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন। তিনি উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য পৃথক পৃথক বিল প্রস্তুত পূর্বক উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার বরাবর প্রেরণ করবেন।
ছ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেরামত /সংস্কার কাজের জন্য ক্যাাশ বহি, মাস্টার রোল এবং বিল ভাউচার এর এক কপি নিজ অফিসে সংরক্ষণ করবেন।
জ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ পুনঃ নির্মাণ সম্প্রসারণ মেরামত / সংস্কার কাজ মনিটরিং নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিবীক্ষণ করবেন এবং
ঝ) বিদ্যালয়গৃহ মেরামত, নতুন গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র মেরামত এবং অন্যান্য সকল কাজের নিয়মিত তদারকি এবং রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করবেন।
প্রাথমিক শিক্ষায় দ্বিতীয় সুযোগ :
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় প্রাথমিক শিক্ষায় ২য় সুযোগ কার্যক্রমে এসএমসি নি¤œরূপ দায়িত্ব পালন করবে:
ক) সরকার কর্তৃক প্রণয়নকৃত নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ;
খ) ক্যাচমেন্ট এলাকার সংশ্লিষ্ট শিশুদের সনাক্তকরণ ও শিক্ষায় দ্বিতীয় সুযোগের আওতায় আনয়ন;
গ) এ কার্যক্রমের আওতায় কেন্দ্র ও স্থান নির্বাচনে সহায়তা করণ;
ঘ) ক্যাচমেন্ট এলাকার সংশ্লিষ্ট শিশু ও অভিভাবকদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করণ ; এবং
ঙ) কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষক নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সহায়তা করণ।
প্রশিক্ষণ:
ক) প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে শিক্ষক নির্বাচন এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে সকল প্রকার প্রশিক্ষনের সহায়তা প্রদান এবং
খ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সাব-ক্লাস্টার ট্রেনিং এবং একাডেমিক তত্ত¡াবধান ও পরিদর্শনে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারকে সহযোগিতা প্রদান।
দুর্যোগকালীন অব্যাহত শিক্ষা:
দুর্যোগ ও আপদকালীন সময়ে ধারাবাহিক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যে এসএমসি নি¤œরূপ দায়িত্ব পালন করবে-
ক) দুযোর্গকালীন সময়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান;
খ) দুর্যোগকালীন সময়ে অভিভাবক শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের সতর্কীকরণ, প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে করণীয় নির্ধারণ;
গ) দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার প্রণীত নির্দেশিকা অনুসরণ করা; এবং
ঘ) প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের জন্য অস্থায়ী ভৌত সুবিধাদি প্রদানে সহায়তা প্রদান।
বিদ্যালয় গমনোপযোগী সকল শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি ও উপস্থিত নিশ্চিত করণসহ বিদ্যালয়ত্যাগী ও বিদ্যালয় বহির্ভুত শিশুদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ, ঝরেপড়া রোধ এবং প্রতিটি শিশুর মানসম্মত শিক্ষা প্রাপ্তির নিশ্চিত করণের এসএমসি উদ্যোগ গ্রহন করবে।
এসএমসি কর্তৃক বিদ্যালয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ :
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও শিক্ষক প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য ৯জন সদস্য পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয় চলাকালে সাবির্ক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। এক্ষেত্রে উক্ত ৯জন সদস্যের মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে ৪জন সদস্য প্রতিমাসে ন্যূনতম যে কোন ৬ দিন বিদ্যালয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। বিদ্যালয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ বিষয়সমূহ অনুসরণ করতে হবে:
ক) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের কার্যক্রমটি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হবে;
খ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি/সদস্য বিদ্যালয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকালে শিক্ষদের নিয়মিত উপস্থিতি পরিবীক্ষণ করবেন;
গ) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সভাপতি/সদস্য বিদ্যালয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকালে শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নে যে কোন পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন;
ঘ) প্রতিমাসে নির্ধারিত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং পূর্ববর্তী মাসের সিদ্ধান্ত/ সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে;
ঙ) সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের সংশ্লিষ্ট সভাপতি/সদস্যদের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম বিষয়ে দায়িত্ব, কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত করবেন; এবং
চ) আলোচ্য পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের জন্য বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত করা যাবে না।
অন্যান্য-
প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকদের মাসিক বেতন বিলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর গ্রহণ পূর্বক বেতন বিল দাখিল করবেন। এছাড়াও এসএমসি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সমস্যাবলি নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ও উপজেলা /থানা শিক্ষা কমিটির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন ও সমন্বয় সাধন; ইউইও এবং এইউইও সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তাবয়ন; নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যপুস্তক , শিখন-শেখানো সামগ্রী সংগ্রহ , সংরক্ষণ এবং বিতরণ নিশ্চিতকরণ; সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম যেমন-জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস, সরকার ঘোষিত বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান , বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি কার্যক্রম সংগঠন ও সম্পাদনের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান; প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী শিশু ও পরিবার নির্বাচনে প্রত্যেক্ষ অংশগ্রহণ; শিক্ষক অভিভাবক সমিতির (পিটিএ) সঙ্গে সংযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধিকরণ; বিদ্যালয়ের সকল রেকর্ড,পর্যালোচনা, সংরক্ষণ ও হালনাগাদকরণ; বিদ্যালয়ের উন্নয়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ; এসএমসি সভার কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট ইউইও বরাবর প্রেরণ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি ও নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করণে এসএমসির সদস্যদের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একাধিক পাড়া কমিটি গঠন; বিদ্যালয়গৃহ ও রাস্তা নির্মাণ, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণসহ অন্যান্য কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান; সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় বার্ষিক শিশু জরিপ, ক্যাচমেন্ট এলাকার ম্যাপ প্রণয়ন, পরিমার্জন ও সংশোধন বিষয়ে সহায়তা প্রদান; স্কুল ফিডিং/স্কুল মিল চালু আছে এমন বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং/স্কুল মিল পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং সর্বোপরি সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্য যে কোন দায়িত্ব পালন।
পরিশেষে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি)’র সদস্যদের তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ/ ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হলে তারা সরকার কর্তৃক প্রণীত নীতিমালানুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ সঠিকভাবে পরিচালনায় সক্ষম হবে।
তথ্য সূত্র-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯
লেখক : প্রধান শিক্ষক, আগ্রাবাদ তালেবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডবলমুরিং, চট্টগ্রাম