পূর্বদেশ ডেস্ক
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকান্ডের সময় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে গুমের ঘটনায় গুররুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণও মিলেছে। সেসব কল রেকর্ড সিআইডিতে ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওভারঅল এভিডেন্সের ব্যাপারে ফরেনসিকের টেস্টের জন্য আমরা কোর্টের আদেশ নিয়েছি। খবর বিডিনিউজের।
৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের দিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং পালিয়ে ভারতে চলে যান।
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ও ‘গণহত্যার’ অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। ভারত এর আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেয়নি।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ফুটেজ, বিভিন্ন মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও কলরেকর্ড বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে, বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে, বিভিন্ন সোর্স থেকে, সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা এগুলো আমরা পেয়েছি; কালেকশন করেছি।
এগুলো কম্পাইলেশনের পর আমরা এখান থেকে বেছে বেছে সে ভয়েসগুলো, সেই ভিডিও ফুটেজগুলো, সেই দৃশ্যগুলো, সেই মেসেজগুলোকে ডিজিটালি ফরেনসিক করার জন্য সিআইডির কাছে পাঠানোর ব্যাপারে, সিআইডিকে একটা ফরেনসিক রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে একটা পিটিশন মুভ করেছিলাম।
তাজুল বলেন, সেই পিটিশনে আমাদের প্রাপ্ত সার্টিফিকেশনগুলোয় ওরা আমাদের সার্টিফিকেশন দেবে। সেক্ষেত্রে যদি ওনারা কোনো বিশেষ ব্যক্তির নাম বলে থাকে, বিশেষ ব্যক্তি না আসলে ওভারল এভিডেন্সের ব্যাপারে আমরা ফরেনসিক টেস্টের জন্য কোর্টের আদেশ নিয়েছি।
এসব তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অসহযোগিতা পাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি।
তাজুল ইসলাম বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সুতরাং কাউকে এ মুহূর্তে দায়ী করা বা বেøইম করার মতো অবস্থায় আমরা যাইনি। আমরা আপাতত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বা কাউকে দায়ী করছি না।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। প্রথমে কোটা ও পর সরকার পতনের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা নিয়ে নানা ধরনের মত থাকলেও এর প্রকৃত সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি তালিকা অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৭০৮। নিহতের সংখ্যা নির্ধারণে তালিকা তৈরির কাজ চলমান।