প্রসঙ্গ : ড. ইউনূস এবং তারেক রহমান লন্ডন বৈঠক

1

রতন কুমার তুরী

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও এসেছেন তারা বেশ কয়েকবার। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করলে বিভিন্ন কারণে তাদের সাথে ড. ইউনূস এর সামান্য দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ড. ইউনূস নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করলে বিএনপির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস নির্বাচনের সময়টি ২০২৬ সালের এপ্রিলে ঘোষণা করলে বিএনপির পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরই নির্বাচনের জন্য সঠিক সময় বলে মত প্রকাশ করেন আর এতেই বিএনপির সাথে ড. ইউনূসের দেখা দেয় মতপ্রার্থক্য। এ নিয়ে দেশে বিএনপি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বেশ বাকবিতন্ডাও চলে। শেষতক বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিকে বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার এবং ড. ইউনূসের সাথে কোনো দ্বন্দ্বে না জড়াতে অনুরোধ জানান আর এতে রাজনীতিতে বরফ গলতে শুরু করে।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস কিংস তৃতীয় চালস হারমনি পুরষ্কার গ্রহণ করতে লন্ডনে গেলে তিনি সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন এবং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিসহ নির্বাচনের তারিখ বিষয়ে কথা বলেন আর এতে করে ড. ইউনূসের সাথে বিএনপির দূরত্বটা কমেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যেহেতু বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামীলীগ দৃশ্যত এখন মাঠে নেই এবং তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ সেদিক থেকে আগামিতে রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে বিএনপিকে অনেকেই পছন্দের সর্বোচ্চ তালিকায় রেখেছেন।
তাছাড়া এ মুহূর্তে বিএনপির যে বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে তাতে তারা খুব সহজেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করছেন। সে হিসেবে লন্ডনে তারেক জিয়ার সাথে ড. ইউনূসের বৈঠক যুক্তিযুক্ত হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ দেশের একটা বৃহৎ দলের সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরোধে যাওয়া উচিত হবেনা। এতে করে তাদের ওপর অর্পিত মহান দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে উপহার দেয়ার বিষয়টি বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। আমরা ড. ইউনূসের সাথে তারেক রহমানের বৈঠককে শতভাগ সমর্থন করি এবং ড. ইউনূসের মেধা ও প্রজ্ঞারও প্রসংশা করি তিনি তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে সঠিক কাজ করেছেন। তানাহলে বিএনপির সাথে তাদের একটা দূরত্ব থেকেই যেতো।
ড. ইউনূস এবং তারেক রহমান লন্ডন বৈঠক রাজনীতিতে আরেকটি উল্লেখ যোগ্য ঘটনা কারণ এ বৈঠকের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি সুন্দরভাবে চলার একটি গতিপথ পাবে। প্রকৃতপক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক গঠিত বিএপি সবসময়ই বাংলাদেশের জনপ্রিয় দল ছিল কিন্তু দলটিতে সবসময় নেতৃত্বের সংকটের কারণেই তারা বিভিন্ন সময়ে পিছিয়ে পড়েছে। বর্তমানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জিয়া পুত্র তারেক রহমান। আশা করছি এ তরুণ নেতৃত্ব বিএনপিকে সামনে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। বর্তমান বিএনপির সামনে স্বর্ণালী সময় অপেক্ষা করছে। তারা যদি এ সময়কে কাজে লাগাতে পারে তাহলে তারা নিশ্চিত একটি ইতিবাচক ফলাফলের দিকে এগিয়ে যাবে।
আমরা বিএনপির তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিকে অনুরোধ করবো আপনারা এবার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশে একটি প্রতিহিংসা এবং হানাহানিমুক্ত রাজনৈতিক চর্চা উপহার দেয়ার এবং জনগণের জন্য কাজ করার আপনারা সেসুযোগ গ্রহণ করুন এবং দেশের জন্য কাজ করুন। ড. ইউনূস নি তারেক রহমান লন্ডন বৈঠকে দু’জনের পক্ষ থেকে যে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সমূহ এসেছে তা নিঃসন্দেহে দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। আমরা এ বৈঠকের দৃশ্যমান সফলতাগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুবাতাস আনবে বলে প্রত্যাশা করি।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক