পূর্বদেশ ডেস্ক
প্রধান উপদেষ্টার মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, তাদের মধ্যে অত্যন্ত ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’র বাইরে অপেক্ষামাণ সাংবাদিকদের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে খোলাসা করে বলেননি ফখরুল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। সেখানে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় সোয়া ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভভন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। আমদের মধ্যে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ফখরুল বলেন, আমরা আশাবাদী এই অন্তর্বতীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, তাদের আন্তরিকতা, দেশপ্রেম ও যোগ্যতা দিয়ে খুব দ্রæত তারা দেশকে একটা স্টেবল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারবেন এবং একই সঙ্গে তারা নির্বাচনের দিকেও যেতে পারবেন। প্রয়োজনীয় সংস্কারসমূহ পূরণ করবেন বলে আমরা মনে করি।
নির্বাচন নিয়ে তাগিদ দিয়ে ফখরুলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাড়াহুড়া না করার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। অবশ্য ফখরুলও সে বিষয়ে জবাব দিয়ে বলেন, যাদের সরকার পরিচালনার সক্ষমতা নেই, তারাই এসব কথা বলে থাকেন। অবশ্যই এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দুই নেতা কেউ পরস্পরের নাম ধরে কথা বলেননি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে পর্যায়ক্রমে।নির্বাচনের কোনো সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো তারিখ নিয়ে আলোচনা করিনি। আমরা কোনো তারিখ বলব না। এটা উনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বলবেন।
অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গত ১২ আগস্ট বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সাত সদস্য যমুনায় গিয়ে প্রথমবার বৈঠক করেন।
গণআন্দোল ও জনরোষের মুখে ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। তিন দিন বাদে গঠন হয় অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে অন্যান্য দল ও সেনাবাহিনী আলোচনা করে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অন্যান্য দলের চাওয়া, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শেষ করে দ্রæত সময়ের মধ্যে তারা একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন।
সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন দেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে রাষ্ট্র সংস্কারের তাগিদে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচন করতে পারবে, সে বিষয়ে এই সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। এ নিয়ে পরিষ্কার বার্তা চাইছিল বিএনপি। সেই ধারায় গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলটির প্রতিনিধিদের বৈঠক হলো।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিরা মূলত বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের ভাবনা ও নির্বাচন নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। তারা (বিএনপি নেতারা) বলেছেন যে এই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। ভবিষ্যতেও এই সমর্থন থাকবে। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে তারা অনুরোধ করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও বলা হয়, তারা (বিএনপি নেতারা) দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা ও সম্ভাবনা আছে, সে ব্যাপারেও তারা একমত পোষণ করেন। সবশেষে তারা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে বর্তমান সরকার সংস্কার, নির্বাচন-সম্পর্কিত ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেবে, সেটা নিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন এবং তারা সেটার একটি সমন্বিত অংশীদার হবেন।