নিজস্ব প্রতিবেদক
মিরসরাইয়ে দলের প্রয়াত ত্যাগী নেতাদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ‘অপ্রীতিকর অবস্থায়’ পড়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার।
জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মিরসরাইয়ে যাওয়ার সময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দলের নেতারা। কিন্তু দলের পদে না থাকা সাবেক এক চেয়ারম্যানকে না জানানো এবং তাকে সঙ্গে না নেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। ওই চেয়ারম্যান তখন গোলাম আকবর খোন্দকার কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফের বাড়ি যাচ্ছেন বলে প্রচার চালান এবং ইউসুফের ছেলে যুবলীগ নেতা হওয়ায় তার বাড়িতে কেন যাচ্ছেন প্রশ্ন তুলে উচ্ছৃঙ্খল কিছু মানুষজনকে জোগাড় করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উস্কানি দেন।
গোলাম আকবর খোন্দকার গতকাল রাতে পূর্বদেশকে বলেন, ‘মূলত গত ৫ আগস্ট থেকে আমি চট্টগ্রামে অবস্থান করে, রাউজান-রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করেছি, বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আজ (শনিবার) আমি ঢাকায় যাচ্ছিলাম। পথে মিরসরাই পৌর বিএনপির সাবেক আহŸায়ক যিনি কারাগারে মারা গেছেন, তিনিসহ আর কয়েকজন নেতার কবর জেয়ারত করব বলে মনস্থির করি। সে কারণে স্থানীয় নেতাদেরও থাকতে বলি। তারাও আমার সাথে যোগ দেন। আমি কারও বাড়িতে যাওয়ার কোনো কর্মসূচিও ছিল না। কিন্তু খৈয়াছড়ায় যাওয়ার পর খবর পেয়ে আমাদের মুুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ তার বাড়িতে চা খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করায় সেখানে থামি। তার বাড়িতে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই নিয়মিত যাতায়াত করেন, যেহেতু তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে যাওয়ার পর কারও ইন্ধনে কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে স্থানীয় বিএনপির নেতারা তাদের প্রতিরোধ করতে চান। কিন্তু আমি তাদের থামিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীকে কল করি।’
গোলাম আকবর খোন্দকার আরও বলেন, ‘যেহেতু বিএনপির নামে কিছু লোকজন এসে মনিরুল ইসলামের ছেলের বিরুদ্ধে বলছে, আমি তখন তাদের অনুভ‚তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে চাইলেও ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা সেটাকে মিডিয়ায় ফলাও করার জন্য নানাভাবে বাধা দিতে থাকে।’
আমাদের মিরসরাই প্রতিনিধি জানান, দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ত্যাগী মরহুম নেতাদের কবর জেয়ারত করতে শনিবার মিরসরাই আসেন গোলাম আকবর খোন্দকার। বেলা ১২ টার দিকে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফের বাড়িতে যান তিনি। তার সাথে ছিলেন উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক নুরুল আমিন, সাবেক আহŸায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহব্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরীসহ নেতাকর্মীরা। ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট প্রায়ই দলীয় সভা করতেন। তাই ওই বাড়িতে গোলাম আকবর খন্দকার যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে বাড়িটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল এবং বাড়ির পার্শ্ববর্তী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে।
পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। এ সময় নেতাকর্মীদের শান্ত করে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সেনাবাাহিনীর সহযোগিতায় গোলাম আকবর খন্দকারকে বিকেল ৪টায় সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য চলে যান।
এ সময় গোলাম আকবর খন্দকার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনিরুল ইসলাম ইউসুফ কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি আমাকে চায়ের দাওয়াত দিলে আমি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউসুফ সাহেবের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দলের কিছু নেতাকর্মীর মুখে শুনি ইউসুফ সাহেবের ছেলে যুবলীগ নেতা। এসব অভিযোগ কেউ তো আমাকে আগে দেয়নি। স্থানীয় নেতাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে একটি অংশ জড়ো হয়েছে। এটি কোনও বিক্ষোভ নয়।’