অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদেনের পর প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ২৬১ কোটি টাকার এলইডি বাতি প্রকল্প। গত বুধবার প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। ফলে আগামী মাস-দুয়েকের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর ৬০ শতাংশের অধিক সড়কে এলইডি বাতি বসবে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ কিলোমিটার সড়কে বসবে আধুনিক এই বাতি।
নগরীকে শতভাগ আলোকায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়ার পথে দাবি করে তিনি পূর্বদেশকে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রায় শতভাগ সড়ক আলোকায়নের আওয়াতায় আসবে। যার মধ্যে ৬০ শতাংশের অধিক এলইডি বাতি। এতে ব্যবস্থাপনা খরচ যেমন কমছে, তেমনি আলোও ধবধবে সাদা। নগরবাসী নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
জানা গেছে, গত ৯ জুলাই একনেক সভায় এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হলে সিটি কর্পোরেশনরে বিদ্যুৎ বিল কমে আসবে প্রায় অর্ধেকে। এছাড়াও বাতি নিয়ন্ত্রণের ৫শ সুইচের বদলে হবে মাত্র ৪টি কেন্দ্রিয় সার্ভার স্টেশন এবং সাশ্রয় হবে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছেন, নগরীতে মোট ১ হাজার ৪৩ কিলোমিটার সড়কে বাতি রয়েছে। এরমধ্যে সোড়িয়াম বাতি রয়েছে ৮শ ৯০ কিলোমিটার এবং এলইডি বাতি রয়েছে ১৫৩ কিলোমিটার। এদিকে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৪৬৭ কিলোমিটার সড়কে সোড়িয়াম বাতির বদলে বসানো হবে এলইডি বাতি। তবে ওই সরানো সোড়িয়াম বাতিগুলো নগরীর অবশিষ্ট সড়ক ও নতুন আবাসিকে সংযোজন করা হবে। ফলে নগরীর সবক’টি সড়কে বসবে বাতি। এমনটায় মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার সড়ক আলোকায়ন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন কাজ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় ৪০, ৬০, ৯০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি এবং ২০ হাজার ২৬৭ টি জিআই পোল বসানো হবে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকার (প্রায় ২৬১ কোটি) টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত এ প্রকল্পের আওতায় ৪১ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ১০ কিলোমিটারে এলইডি লাইট লাগানো হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও সরকারের নিজস্ব অর্থ দিয়ে। যার মধ্যে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা (প্রকল্প ব্যয়ের ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ) এবং জিওবি থেকে ৪৬ কোটি ৪৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা (১৭ দশমিক ২০ শতাংশ )।
নগরীর আলোকায়নে প্রায় ৫১ হাজার ৫৭৩টি সোডিয়াম বাতি রয়েছে। বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও সামাজিক সংগঠন কার্যালয়ের ১ হাজার ৫৩৪টি সুইচিং পয়েন্ট থেকে এই বাতিগুলো ‘অন-অফ’ করা হত। এ কাজে প্রত্যেক পয়েন্টে নিয়োজিত আছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একজন করে মোট ১ হাজার ৫৩৪ জন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও পুরোহিত। তাঁদের প্রত্যেকে ২ হাজার ৫শ টাকা করে সম্মানি প্রদান করে আসছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুইচ কমে আসবে প্রায় ৫০০টি। ফলে সিটি কর্পোরেশনের অর্থ সাশ্রয় হবে বছরে সাড়ে ১২ লাখ টাকা। জানা গেছে, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাতিগুলোর সুইচ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যারজন্য স্থাপন করা হবে ৪টি কেন্দ্রিয় সার্ভার স্টেশন। যেখান থেকে সহজেই ‘অন-অফ’ ও কমানো-বাড়ানো যাবে। এছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা খরচ বহন করবে বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¡াবধায় প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশ পূর্বদেশকে বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে ২০ হাজার ৬শ এলইডি লাইট লাগানো হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের ১০ কিলোমিটারের মত এলাকায় নতুন করে এলইডি বাতি লাগানো হবে। তাছাড়া রাজস্ব খাত ও মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ৭০ কিলোমিটার প্রধান সড়ক আলোকায়নের আওতায় এসেছে। ফলে পুরো নগর এলইডি আলোকায়নের পথে এগুচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এই প্রকৌশলী।
তিনি আরও বলেন, এলইডি লাইট লাগানোর কারণে বিদ্যুৎ বিল কমে আসবে অর্ধেকে। এছাড়াও আগে প্রায় ১৫শ সুইচ বিভিন্ন মসজিদ মন্দিরে বসানো হয়েছিল সড়কের বাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। এই প্রকল্পের অধীনে স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে চারটি সার্ভার স্টেশনের সাহায্যে কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ফলে প্রায় ৫শ সুইচ ব্যবস্থাপনা বাবদ প্রায় সাড়ে ১২ লাখ সাশ্রয় হবে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ৪০ওয়াট টিউব বাতি (ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্প), ৬৫ ওয়াট এনার্জি বাতি (সিএফএল), ১৫০ওয়াট হাইপ্রেসার সোডিয়াম, ৪০০ওয়াট মেটাল হ্যালাইড বাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলোতে বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ অপচয় হয় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডও বৃদ্ধি করে। যা শহরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়ক বাতির আলোক সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। রাত্রিকালীন শহরের সৌন্দর্য, ব্যবসায়িক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে কম কার্বন নির্গমন এবং শক্তি শোষণ সর্ম্পকিত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাফিক ও পথচারীর জন্য স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সড়ক বাতির আলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।