প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয় শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলি

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

দীর্ঘ ছয় বছর পর বিএনপির সমাবেশে ভাষণ দিলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া; প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ভুলে শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার বার্তা তিনি নেতাকর্মীদের দিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বুধবার ঢাকায় নয়া পল্টনে প্রথমবারের মত সমাবেশে মিলিত হয় বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেখানে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেবেন, তা আগেই নেতাকর্মীদের জানা ছিল। কিন্তু তারেক রহমানের বক্তব্যের পর হাসপাতালে থাকা খালেদা জিয়ার ছবি মঞ্চের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠলে উল্লাসে ফেটে পড়েন নেতাকর্মীরা। খবর বিডিনিউজের
খালেদা জিয়া তাদের উদ্দেশে বলেন, ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়। শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ যেন গড়ে তুলি।সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম নেতাকর্মীরা তার ভাষণ শুনলেন। ২০২০ সালে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি মিললেও সরকারের শর্তের কারণে তাকে গুলশানের বাড়িতে একপ্রকার বন্দিজীবনে থাকতে হয়েছে। এই সময়ে দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দন্ড মওকুফের সিদ্ধান্ত জানালে মঙ্গলবার পুরোপুরি মুক্তি পান খালেদা। তবে অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি আছেন হাসপাতালে। সেখান থেকেই তিনি সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সে ভাষণ দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি। আমি কারবন্দি অবস্থায় আপনারা আমার কারামুক্তি ও রোগমুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন, সেজন্য আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী, অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বীর সন্তানদের, যারা মরণপণ সংগ্রাম করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। সাথে সাথে শহীদদের শ্রদ্ধা। দীর্ঘদিনের নজীরবিহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ছাত্র, তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণরা যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রত্যেককে মেধা, জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল বুধবার বেলা ২টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজারো নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে এই সমাবেশ শুরু হয় কোরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে। সমাবেশের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের আত্মর মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। কাকরাইল থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রের রূপ নেয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশের শুরুতে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। সদ্য কারামুক্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকশ কেন্দ্রীয় নেতা যোগ দেন সমাবেশে।
জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্যের পর ভিডিওকলে বক্তৃতা দেন সমাবেশের প্রধান অতিথি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছরে তারেক রহমানের বক্তব্য দেশে কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়নি। সর্বশেষ গতবছরের ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির বিশাল সমাবেশে লন্ডন থেকে তারেক রহমান বক্তব্য দেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তার এই বক্তব্য ওই সময়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা যায়নি।