প্রতিনিধি প্রত্যাহার ও গণভোট ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব

1

জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে প্রত্যাহার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূণ সিদ্ধান্ত নিতে জনগণের মত যাচাইয়ে গণভোট ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে অন্যান্য সুপারিশের সঙ্গে এই দুটি ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে গণভোটের বিধানটি আগামী সংসদে উত্থাপন করে পাস করা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিনিধি প্রত্যাহার বা রিকল ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল শনিবার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
তার আগে ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। সেদিন প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপও সংবাদিকদের কাছে তুলে ধরা হয়।
সেখানে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার বাতিল, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বাতিল, জাতীয় নির্বাচনে ‘না-ভোট’ ফেরানো,‘না-ভোট’ বেশি পড়লে নির্বাচন বাতিল, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই বারে সীমিত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানো, অনলাইন ভোটিং চালুর সুপারিশ করেছিল বদিউল আলম মজুমদার কমিশন। এর সঙ্গে এবার গণভোট এবং প্রতিনিধি প্রত্যাহারের বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে মতামত নেওয়ার পদ্ধতি গণভোট। এটি মূলত জনমত যাচাইয়ের একটি পদ্ধতি, যেটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে। বিভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা বিষয়ে গণভোট হয়েছে। যেমন, সংবিধান সংশোধন, গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ইত্যাদি।
গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বরর সংবিধানের ওই ধারাটি বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্ট গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার রায় দেয়। আদালতের রায়ে গণভোটের বিধানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ‘জেনারেল ক্লজ অ্যাক্ট’ এর ৬ ধারা অনুযায়ী কোনো আইনকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে সংসদে আইনটি পাস করতে হবে।
জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি প্রত্যাহার ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এড়াতে নির্বাচিত প্রতিনিধির মেয়াদের প্রথম ও শেষ বছরে প্রত্যাহার কার্যকর না করার প্রস্তাবও করেছে কমিশন।
আওয়ামী লীগের আমলে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক ‘কারচুপি’, ‘জালিয়াতি’, ‘রাতে ভোট দিনে করা’, ভোটকেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এছাড়া দলটির শাসনামলে ব্যাপক ‘দুর্নীতি’, অর্থ ‘পাচারের’ অভিযোগ ছিল আলোচিত। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘কর্তৃত্ববাদী’ শাসন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও ছিল।
এমন প্রেক্ষাপট ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারে লক্ষ্যে গত অক্টোবরে প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন অন্যতম।
এছাড়া সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য এবং এক সঙ্গে একজন দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা যাতে হতে না পারেন সে বিধান চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্কার কমিশন।
সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের ও সে কক্ষের আসন বণ্টন সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিক) করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পরে নির্বাচিত সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়।
প্রয়োজনে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাস নির্ধারণ করে এ সময়ের মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন এবং স্থানীয় নির্বাচনকে নির্দলীয় করতে আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়।
আর নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য ১০% জেলা এবং ৫% উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য রাখার বিধান করতে বলা হয়েছে।
পরপর দুটো নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে, এমন বিধানও বাতিল করতে বলা হয়েছে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায়ও আনতে বলেছে বদিউল আলম কমিশন।
নির্বাচনে ভোট দিতে প্রবাসী ভোটরদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
প্রতিবেদন তৈরি করতে কমিশন ৬৪টি সভা ও ২২ বার অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করার কথা জানিয়েছে। আর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ৭৫২ জনের মতামত নিয়েছে কমিশন।