প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ

1

হাটহাজারী প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হালদা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন চেংখালী খালের উপর ৪৫ বছর আগে নির্মিত স্লুইসগেটটি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে উপজেলার মেখল ও গড়দুয়ারা ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন হালদা নদীর জোয়ারের পানিতে শত শত একর জমির ফসল নষ্টের পাশাপাশি ওই দুই ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
দুর্ভোগ লাঘবে গত বছরের এপ্রিল মাসে পাউবো কর্তৃপক্ষ হালদা বেড়িবাঁধের উপর প্রায় ২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্লুইসগেটটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। আধুনিক মানের ছয় কপাটের স্লুইসগেটের পুনঃনির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৯২ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এরমধ্যে পুনঃনির্মাণাধীন স্লুইসগেটের জায়গাসহ প্রায় ৭০.৭৫ শতক জায়গার মালিক দাবি করে উপজেলার ফতেপুরের বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম দম্পতি (স্ত্রী মিনু আরা বেগম) পাউবো চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে গত ১৩ মে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নং-৭৪৯০/২০২৫) করলে পরদিন থেকে উক্ত স্লুইসগেটের পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এর প্রতিবাদে গত শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে গড়দুয়ারা সচেতন নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে ওই স্লুইসগেট এলাকায় গণজমায়েত ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গড়দুয়ারা ও মেখল ইউনিয়নের শত শত জনসাধারণ অংশ নিয়ে আগামি ২৯ জুনের মধ্যে স্লুইসগেইটির পুনঃনির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে এলাকার হাজারো মানুষের ঘরবাড়ি রক্ষায় ও স্থানীয় জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় আগামি ৩০ জুন উপজেলা প্রশাসনের সামনে মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানায় পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
গড়দুয়ারা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম ভুট্টো ও মো. আলমগীর সওদাগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই স্লুইসগেটটি যথাসময়ে নির্মিত না হওয়ায় প্রতিদিন হালদা নদীর জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। যার ফলে গড়দুয়ারা ও মেখল ইউনিয়নসহ আশেপাশের লক্ষাধিক মানুষকে প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা জোয়ারের পানির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন জোয়ারের সময় মেখল ও গড়দুয়ারা ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা, চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় মৎস্যচাষীরা। বিগত দুই বছর ধরে এলাকার শত শত একর ফসলি জমিতে বন্ধ রয়েছে কৃষিকাজও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে ১৯৮০ সালে নির্মিত হালদা বেড়িবাঁধের উপর পাউবো চেংখালী খালের স্লুইসগেটটি পুনঃনির্মাণ করছে পাউবো। ছয় কপাটের আধুনিক এই স্লুইসগেটটির প্রায় ৯২ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এরমধ্যে রফিকুল ইসলাম নামে একব্যক্তির স্ত্রী মিনু আরা বেগম হাইকোর্টে রিট করার কারণে স্লুইসগেটটির পুনঃনির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। রিট পিটিশনের বিষয়টি আমলে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন তথা ভ‚মি অফিসের সার্ভেয়ার ও অভিযোগকারীদের সার্ভেয়ারকে নিয়ে যত দ্রæত সম্ভব যথাযথভাবে যাচাই-বাচাই করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে তিনি জানান।