প্রচারণায় উৎসবের পাশাপাশি উত্তাপ

39

ভোটের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা ছুটছেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। নাওয়া-খাওয়া দিন রাত নেই। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকছেন প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে প্রচারণায় উৎসবের পাশাপাশি রয়েছে উত্তাপ। গণগ্রেপ্তার, হামলা, ভাঙচুর, প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থীরা। রবিবার হালিশহর নয়াবাজারে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিজয় র‌্যালিতে হামলা হয়েছে। রাতে বিএনপির আরেক প্রার্থী ডা. শাহাদাতের বাসায়ও তল্লাাশির অভিযোগ করা হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর ভোট। নগরী ও জেলার ১৬ আসনের প্রার্থীরা বসে নেই। তারা প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছেন। পথসভা, গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ র‌্যালি করে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা এখনো পর্যন্ত প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। মিরসরাই, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বন্দর-পতেঙ্গা, হালিশহর-ডবলমুরিং, কোতোয়ালী-বাকলিয়া, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ সবকটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা দিনরাত প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে থাকছেন শতাধিক নেতাকর্মী। প্রার্থীদের পাশাপাশি তারাও ভোট প্রার্থনা করছেন নৌকা প্রতীকে। ভোরে বের হচ্ছেন গভীর রাতে ফিরছেন। ছুটে চলেছেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। কোন সমর্থক বা ভোটারের বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া সাড়ছেন। অনেকের তাও হচ্ছে না। গণসংযোগের এক পর্যায়ে পথসভা, উঠান বৈঠকও করছেন। বৈঠকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। নারীদের প্রতিও একই অনুরোধ জানাচ্ছেন। প্রার্থীরা গত বছরে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন এবং উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আবারো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার অনুরোধ জানাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, দেশ এখন নির্বাচনমুখী। ভোটের আমেজে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে চট্টগ্রামে। সব এলাকায় প্রার্থীরা মাঠে। নেতাকর্মীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন। নৌকার গণজোয়ার দেখে বিএনপি পাগলের প্রলাপ বকছে। নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ। কোনভাবেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাবে না।
মহাজোটের তিন প্রার্থী হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও ফটিকছড়িতেও জোরেসোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারাও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে মহাজোটকে ক্ষমতায় আনার আহবান জানাচ্ছেন। ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু প্রার্থীরা নয়, তাদের পক্ষে নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। তারাও বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা মাঠে রয়েছেন।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থীরাও বসে নেই। তারাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছুটছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। নগরী ও জেলার সবক’টি আসনে বিএনপি ও শরিকদলের প্রার্থীরা ভোর থেকে রাত অবদি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীরাও পৃথকভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে কোন কোন আসনে তা চলছে ঢিমেতালে।
দেখা যায়, প্রচারণায় বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে। প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রত্যেক এলাকায় গেলেও বিএনপি প্রার্থীরাও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালিয়ে গেলেও বিএনপিতে ভীতি বিরাজ করছে। মামলার আসামি নেতাকর্মীরা বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এছাড়া হামলা মামলার। ভয়েও অনেকে বের হচ্ছেন না। গ্রেপ্তার আতংক রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে গেছে। আবারো ক্ষমতায় আসতে জুলুম অত্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে। রবিবার হালিশহর নয়াবাজারে বিজয় র‌্যালিতেও হামলা চালিয়েছে। ধানের শীষের জোয়ার দেখে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যতই অত্যাচার করা হোক বিজয় আমাদের আসবেই। তিনি বলেন, পুলিশ গণগ্রেপ্তার করছে, যা সংবিধানের লংঘন। আমাদের প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না।
জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে প্রচারণা উৎসবের পাশাপাশি উত্তাপও রয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালালেও বিএনপি হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গণসংযোগ, পথসভা, প্রচারণায় হামলার অভিযোগ করা হচ্ছে।
রবিবার হালিশহর নয়াবাজার মোড়ে বিএনপির বিজয় মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করার অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান। এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। এ ঘটনায় বিএনপির আটজন আহত ও পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিজয় দিবসের মিছিল করতে সাধারণত পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি লাগে না। এরপরও কয়েকদিন আগে পুলিশ প্রশাসনের কাছে হালিশহরের নয়াবাজার মোড়ে বিজয় মিছিল করার কথা জানিয়েছি। কিন্তু আধঘণ্টা ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তান্ডব চালিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এসময় পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাইনি।
তিনি বলেন, আমার ৫০ বছরের রাজনীতি জীবনে এরকম আর হামলার মুখোমুখী হইনি। তারা অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। এরমধ্যে দু’জনকে অস্ত্র বের করতে দেখেছি। কোনোরকম প্রাণরক্ষা হয়েছে আমার।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের বিএনপির প্রার্থী কারাবন্দি ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসায় পুলিশ তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন মা শায়স্তা খানম। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় নগরের বাদশামিয়া সড়কে শাহাদাতের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, রবিবার রাত তিনটার দিকে একাধিকবার কলিং বেল দেয়। বাসার কাজের লোক গিয়ে ডোর ভিউ দিয়ে দেখেন বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়ানো। পরে তারা আমাকে এসে বিষয়টি বললে, আমি জিজ্ঞেস করি আপনারা কারা? তখন তারা পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলেন।
তিনি বলেন, এসময় পুলিশ সদস্যরা বাসা তল্লাশি করেন। আমি তাদের প্রশ্ন করি, শাহাদাত-তো কারাগারে তারপরও আপনারা বাসায় কেন?
শায়স্তা খানম শাহাদাতের প্রচারণায় হামলা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। এর আগে চন্দনাইশে জোট ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী কর্নেল (অব.) অলি আহমদের প্রচারণাও হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলায় অলির পুত্রসহ ৮ জন আহত হন। চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানের গাড়িতে বোমা হামলার অভিযোগ করা হয়েছে।
নগরী ও জেলার ১৫টি আসনে নৌকা প্রতীকের পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। দেয়াল, ঘর, দোকান সব জায়গায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুনও লাগানো হয়েছে শত শত। হাটহাজারীতে রয়েছে নাঙ্গলের পোস্টার-ব্যানার। তবে বিএনপি প্রার্থীদের ধানের শীষের পোস্টার, ব্যানার তুলনামূলক অনেকটা কম। নগরীর চারটি আসনেও একই অবস্থা। ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টা লাগানো হয়েছে অনেক কম।
নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশ মাঠেও নামতে দিচ্ছে না। পোস্টার লাগাতে গেলেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ছাত্রলীগও হামলা চালাচ্ছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা পোস্টার ব্যানার লাগাচ্ছি। রাতে আওয়ামী লীগ সেগুলো ছিঁড়ে ফেলছে।