প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি কাম্য নয়

3

গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড তাপদাহে উষ্ঠাগত জনজীবন। এরমধ্যে চট্টগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসলেও চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ মানুষের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা ও আতঙ্কও কম নয়। বিশেষ করে নগরীতে বৃষ্টি মানে জলাবদ্ধতা, যা নিম্নাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির অন্যতম কারণ। একদিকে প্রচন্ড গরম থেকে বাঁচতে বৃষ্টির প্রার্থনা, অপরদিকে বৃষ্টির তীব্রতায় আবার ডুবে বসে ঘরবাড়ি, দোকানপাট। এক ত্রিশঙ্কুর অবস্থায় পড়ে চট্টগ্রামের নাগরিক জীবন। এ থেকে উদ্ধারের জন্য হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চলছে, কিন্তু কোন গতি মিলছেনা। এরমধ্যে সাগরে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। যার প্রভাবে গত সোমবার রাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান। ভারী বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, যা নাগরিক দুর্ভোগকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় সড়ক হাঁটুসমান পানিতে ডুবে গেছে, এমনকি নিচু এলাকায় বসবাসরতদের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী ও কাপাসগোলা এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে গর্তে পড়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে। নগরবাসীর অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়া যেন চট্টগ্রামের নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেন, নানা প্রকল্প ও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও এই সমস্যা থেকে কোনো মুক্তি মিলছে না। বাকলিয়ার এক ভুক্তভোগী বলেন, “বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের ময়লাও ঢুকে গেছে ঘরে। কিছু কাপড়চোপড় আর দরকারি জিনিস উঁচুতে তুলে রাখতে হয়েছে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুব সমস্যায় আছি।” একইভাবে চকবাজারের জলাবদ্ধতায় আটকে থাকা এক অসহায় নাগরিক বলেন, “ড্রেনেজ লাইন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি বৃষ্টিতেই আমাদের এলাকা পানিতে ডুবে যায়।”
এ সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে, তখন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর উত্তাল আছে। মাছ ধরা ট্রলারসহ নৌযানগুলো তীরে ফিরে এসেছে। আবহাওয়া অফিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত থেকে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এতে চট্টগ্রামে পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা আছে। নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতজুড়ে উত্তাল সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। তীরবর্তী লোকালয়ের কিছু কিছু অংশে পানিও ঢুকেছে। সমুদ্র সৈকতের অস্থায়ী দোকানপাটগুলো গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। সকালের দিকে সৈকতে কিছু লোকজনের আনাগোনা থাকলেও বিকেল থেকে একেবারেই জনশূন্য দেখা গেছে।
সাগরের তীরে ও কর্ণফুলী নদীতে নৌযানগুলোকে নিরাপদে রাখা হয়েছে। জেলেদের জাল নিয়ে ঘরে ফিরতে দেখা গেছে। এছাড়া, সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে ছোট নৌযানের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার কাছে দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম শেষ করতে পারে। এরপর এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোঁড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৮ বছর ধরে সরকারিভাবে প্রায় ১৬ হাজার ৭৭১ কোটি টাকার চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এই প্রকল্পগুলোর আওতায় রয়েছে খাল পুনঃখনন, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রেগুলেটর স্থাপন এবং নতুন সড়ক নির্মাণ। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের অনেক খাল-নালা এখনো উন্মুক্ত ও অব্যবস্থাপনায় রয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। সম্প্রতি খালেপড়ে শিশুর মৃত্যুসহ বেশকয়েকটি ট্র্যাজেডি ঘটেছে। এরপরও নগরবাসী আশাবাদী জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হোক। তবে সেই কবে শেষ হবে, কবে নগরবাসীর মুক্তি মিলবে? এমনটি জিজ্ঞাসা রয়েই গেল। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন নগরবাসী। তারা মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আরো দ্রæত করা জরুরি।