প্রকল্প পাহাড় কাটার কথা ‘স্বীকার করলেন’ পরিচালক

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পে পাহাড়া কাটার অভিযোগের পর এবার বিষয়টি খোলাসা করলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন। গতকাল বুধবার চমেক হাসপাতাল পরিচালকের সভাকক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। এ সময় পরিচালক পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি বলেও জানান।
তিনি বলেন, ভৌত অবকাঠামোগত কাজ করার আগে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়কে ঢাল করে কেটে এতে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাম বসানো হবে। এতে ভবিষ্যতে পাহাড়ধসের শঙ্কা কমে আসবে। যে জায়গায় পাইলিং করা হবে সেখানে উন্নতমানের ঘাস লাগানো হবে। যাতে বৃষ্টি হলে তা গড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যায়। এ কাজের জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র নেওয়া ছিল না আমাদের। বিষয়টি নজরে আসার পরপরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশে কাজ বন্ধ রাখা হয়। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবো। ছাড়পত্র পেলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।
পরিচালক আরও বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২ বছর। কিন্তু চীনা প্রতিনিধি দল নির্ধারিত সময়ের আগে এই কাজ শেষ করে ফেলতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাদের হিসেবে অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হলেও এই দিন উপস্থিত ছিলেন না পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো প্রতিনিধি। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে প্রকল্পের চীনা প্রতিনিধি দলেন প্রধান মে ইইউ চ্যং বলেন, পাহাড়টা দেখার পর মনে হয়েছে পাশে ভবন হলে জায়গাটি নিরাপদ হবে না। কারণ ভবনে বেইজ করার সময় পাহাড় ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ পাহাড়ের মাটিগুলো খুবই নরম। পানির স্পর্শ পেলে নিচের দিকে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর প্রকৌশলীরা সয়েল নেইলিং প্রযুক্তির মাধ্যেমে পাহাড়টি ড্রেসিং করে কলাম বসিয়ে কাজ করা হবে। এতে ঘাস রোপণ করা হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহী বলেন, গত বছরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছিল। তখন উনারা বলেছিলেন পাহাড় রক্ষা করে কাজ করবেন। আজকে আবার উনারা বলছেন, পাহাড়ধসে পড়ার কারণে তারা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছেন। যেকোনো প্রকল্প করতে হলে পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা (ইআইএ) করতে হয়। কিন্তু ইআইএ না থাকায় আমরা অবাক হয়েছি। চমেক হাসপাতালের মত একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের অবহেলা আশা করা যায় না। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ রাখা হয়েছে তারা সৌন্দর্যবর্ধন গাছের সঙ্গে যাতে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগান।
এর আগে বার্ন ইউনিট প্রকল্প এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগ তুলে সংবাদ পরিবেশন হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপরই তড়িঘড়ি করে এই অংশীজন সভা ডাকে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।