চবি প্রতিনিধি
শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও পূর্বদেশের চবি প্রতিনিধি শাহরিয়াজ মোহাম্মদের উপর হামলার দুটি পৃথক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোট ৮৪ জনকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে চবি প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় এ ঘোষণা দিলেও বহিষ্কৃতদের সুস্পষ্ট কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি চবি প্রশাসন।
গত শুক্রবার সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় ১১ জন এবং শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ৭১ জন সহ বহিষ্কৃত মোট ৮৪ জনের নাম সম্বলিত একটি তালিকা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। সে তালিকা ঘাটতে গিয়ে সেখানে ব্যাপক অসঙ্গতি দেখা গেছে। কোনো প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তির স্বাক্ষর ব্যতিত সে তালিকায় দুটি অভিযোগের অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় অভিযুক্ত হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরকেই মূলত বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন অসঙ্গতিপূর্ণ তালিকা প্রকাশকে দায়সারা ও লোকদেখানো বলে মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তালিকায় সরাসরি বহিষ্কৃত উল্লেখ করে কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। দুটি তালিকায় অভিযুক্ত হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদেরকেই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ৩০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীদের নামে অভিযোগ জমা পড়েছে। তাদের সবাইকে আমরা বহিষ্কার করিনি। যাদের ব্যাপারে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে শুধু তাদেরকেই বহিষ্কার করেছে বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটি।’
প্রকাশিত সে তালিকায় ‘বহিষ্কৃত’ উল্লেখ না করে শুধুমাত্র অভিযুক্তদের বহিস্কৃত হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রক্টর বলেন, ‘আমরা অফিসিয়ালি এখনো কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিনি। শুধুমাত্র আপনাদের জানার সুবিধার্থে এ তালিকাটি আমরা দিয়েছি। এটি একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত মাত্র। আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আরো অনেক কাজ বাকি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বহিস্কৃতদের সুস্পষ্ট তালিকা প্রস্তুত করে প্রত্যেকের বিভাগ, ইন্সটিটিউট, হল ও বাড়িতে চিঠি পাঠানো হবে। বহিষ্কৃতকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিঠির উত্তর দেয়ার জন্য ১৫ কর্মদিবস সময় দেয়া হবে। তার দেয়া উত্তরকে রিভিউ করে শাস্তি কমানো, মওকুফ বা বৃদ্ধিও করা হতে পারে। এমনকি সনদ বাতিলের সিদ্ধান্তও হতে পারে। এছাড়া আরো আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া অনেককে সেই ৮৪ জনের তালিকায় দেখা গেছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই নয় তাদেরকে কীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘স¤প্রীতি ও শৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটি’ বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির কাছে তাদের অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বলে সুপারিশ করেছে। আমরা সে সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটির আহব্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমীন বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় খুব কম ছিল। তাই প্রাথমিকভাবে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছি তাদের সবাইকে একটি কমন শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এ নিয়ে আরো উচ্চতর যাচাই বাছাই হবে। বহিষ্কৃতরা আপিল করলে তাদের আপিলের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হতে পারে।’
অপরদিকে এমন অসঙ্গতিপূর্ণ তালিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহলে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সহ-সমন্বয়ক রশিদ দিনার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কারের নামে স্রেফ মূলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তারা যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে বহিষ্কার শব্দটি একবারও উল্লেখ নেই। অভিযুক্তদের তালিকা প্রকাশ করে তাদেরকে বহিষ্কৃত বলে চালিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বই নেই এমন অনেককে কীভাবে বহিষ্কার করেছে তা আমি বুঝতে পারছি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত তালিকায় অনেক রাঘববোয়াল বাদ পড়ে গেছে। জুলাই বিপ্লব চলাকালীন সময়ে সরাসরি হামলা ও হত্যার হুমকি দেওয়া অনেককেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাছাড়া ওই তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কারোরই স্বাক্ষর নেই। কর্তৃপক্ষ চাইলেই যেকোনো সময় তালিকাটি অস্বীকার করার সুযোগ আছে। এগুলা স্রেফ দায়সারা কাজ ও লোক দেখানো ব্যতিত আর কিছুই নয়।’