পোশাক খাতে ৫৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

12

করোনা ভাইরাসের উর্ধ্বগতির কারণে লকডাউনে পোশাক খাতে ৫৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছে খাতটির চার সংগঠন। তাই ক্ষতি এড়াতে লকডাউনে পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতারা। গতকাল রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমইএ) ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, দেশজুড়ে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। গত বছর সাধারণ ছুটি এবং পরবর্তীতে দুই ঈদে শ্রমিকেরা যেভাবে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন, আমরা সে পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছি। আমাদের আশঙ্কা লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই অনেক শ্রমিক শহর ছাড়তে পারেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই শ্রমিকেরা যদি শহর ছাড়েন, তবে তা দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়িয়ে দেবে। এ অবস্থায় সরকারের কাছে আমাদের আবেদন সার্বিক দিক বিবেচনায় রপ্তানিমুখী পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের সহযোগী শিল্পগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হোক।
তিনি বলেন, সামনেই রমজান মাস শুরু হচ্ছে এবং আগামী ঈদে শ্রমিকের বেতন ও বোনাসের বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও স্পর্শকাতর। এর পরের দু’মাসের মধ্যে আরও একটি ঈদ বোনাসের চাপ রয়েছে। এরকম একটি সময়ে পোশাক শিল্পকে লকডাউনের আওতায় আনা হলে শ্রমিক ও শিল্প অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
আবদুস সালাম বলেন, যেহেতু পোশাক খাত আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনের একটি অংশ, আমাদের ক্রয়াদেশগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে এবং সেই অনুযায়ী আমাদের উৎপাদন ও জাহাজীকরণ কার্যক্রম পুর্বনির্ধারিত থাকে। তাই এই খাতে লকডাউন কার্যকর হলে নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে। সেই সাথে সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট, কন্টেইনার জট ও অন্যান্য বিপত্তি যুক্ত হবে যার রেষ পরবর্তী কয়েক মাস টানতে হবে।
পোশাক খাতকে লক ডাউনের আওতায় আনা হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে বাজার হারানোর আশঙ্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে অন্য কোনও দেশে তাদের শিল্প বন্ধ থাকার খবর আমাদের কাছে নেই। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমাদের সকলে মিলে এই দুর্যোগপূর্ণ সময়টি মোকাবেলা করতে হবে। কোভিডের প্রাদুর্ভাব কতটা দীর্ঘায়িত হবে তা আমরা জানি না, তাই বিগত দিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে দুর্যোগের বাকি সময়টুকু মোকাবেলা করতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পোশাক খাত ইতিমধ্যেই সুশৃঙ্খল ও তুলনামূলক নগণ্য সংক্রমণ ঝুঁকির প্রমাণ দিয়েছে। এই অর্জনের উপর আস্থা রেখে স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রতিপালন ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ বজায় রাখা, এত ব্যাপক সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষকে কর্মস্থলে ধরে রাখা এবং শিল্পকে সুরক্ষিত রাখাই কৌশল হওয়া উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতা আবদুস সালাম।
এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বিজিএমইএসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো যে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তা আরও শক্তিশালী, বেগবান এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ হারিয়েছে পোশাক খাত এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি হারিয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। ২০২০ সালের এপ্রিল নাগাদ পোশাক খাতের ১ হাজার ১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান ৩১৮ কোটি ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতের শিকার হয়েছে। ৯০ শতাংশ প্রত্যাহার হলেও মূল্যছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট মেনে নিতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে চলাচলে ৭ দিনের বিধিনিষেধ আরোপ হয়। গতকাল রবিবার জানানো হয়েছে আজ ও আগামীকাল মঙ্গলবার চলমান লকডাউন ধারাবাহিক থাকবে। এ ছাড়া ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন।