পেকুয়া প্রতিনিধি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিজ জন্মভূমি পেকুয়ায় বরণ করে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন।
ভারতের শিলং থেকে ৯ বছর পর দেশে এসেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এদিকে তাঁকে বরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন কক্সবাজার-১ আসনের (চকরিয়া-পেকুয়ার) বিএনপির নেতা- কর্মীরা। সম্প্রতি গত ১১ আগস্ট দুপুরে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছান। এসময় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাকে শুভেচ্ছা জানান। ওইদিন থেকে তিনি ঢাকার গুলশান নিজ বাস ভবনে অবস্থান নেন। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। গত ২৪ আগস্ট নিজ এলাকা কক্সবাজারের পেকুয়া আসার কথা ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের। সংগত কারণেই তারিখটি পিছিয়ে আগামী ২৮ আগস্ট বুধবার পেকুয়ায় আসছেন জনপ্রিয় এই নেতা। তাঁকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন । এলাকায় তাঁর আগমনকে ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়ক, চকরিয়া বরইতলী মগনামা সাব মেরিন সড়ক, চকরিয়া-বদরখালী সড়কসহ গ্রামীণ জনপদের অসংখ্য সড়কের দুই পাশে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করছে দলীয় নেতাকর্মীরা। ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে নেতা-কর্মীরা তাদের প্রিয় নেতার আগমনকে স্বাগত জানিয়েছে। রং বেরংয়ের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পেকুয়ার প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনীসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। সজ্জিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় এই নেতার হাতে প্রতিষ্ঠিত শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আশ পাশের প্রতিটি অলি-গলির মুখে সাঁটানো হয়েছে শুভেচ্ছা ব্যানার ও পোস্টার। উপজেলা জুড়ে দেখা গেছে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের জোয়ার। দীর্ঘ বছর পর ভারত থেকে ফিরে আসা পেকুয়ার কৃতি সন্তান সালাহউদ্দিন আহমেদকে এক নজরে দেখতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবি নারী পুরুষ।
এদিকে নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে উপজেলার দলীয় প্রধান কার্যালয়। ওইদিন হাজার হাজার নারী পুরুষ তাকে সংবর্ধিত করবেন।
দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে ২৮ আগস্ট বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রিয় মাতৃভূমি পেকুয়ায় বিকেলে এক জনসভায় যোগ দেবেন। ওইদিন পার্শ্ববর্তী উপজেলা চকরিয়া, মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা, দ্বীপাঞ্চল মহেশখালী ও কুতুবদিয়া থেকেও লোকসমাগম হবে পেকুয়ার জনসভায়। এদিকে সালাহউদ্দিন আহমেদের আগমন উপলক্ষে তাকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিদিন শুভেচ্ছা মিছিল বের করছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।
পেকুয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট বলেন, দীর্ঘ বছর প্রতীক্ষার পর আমরা প্রিয় নেতাকে কাছে পাবো। প্রিয় নেতার এই আগমনে আমরা নেতা-কর্মীরা উল্লসিত-আনন্দিত’। ওনাকে বরণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রিয় নেতাকে দেখতে রাস্তার পাশে হাজারো নারী পুরুষের সারিবদ্ধ অপেক্ষার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করবে। তাঁকে বরণে এসময় কয়েকশত গাড়িবহন নিয়ে বিশেষ র্যালি অনুষ্ঠিত হবে যা একই স্থানে গিয়ে শেষ হবে। সেখান থেকে গাড়ি বহরে পেকুয়ার চৌমুহনী কলেজ গেইট চত্ত্বরে এক পথসভায় যোগ দেবেন। সভা শেষে সদর ইউনিয়নের সিকদার পাড়া তাঁর নিজ বাস ভবনে অবস্থান করবেন।
পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম বাহাদুর শাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপরে দেশে ফিরছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বুধবার কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে চকরিয়ায় পৌঁছে বাস টার্মিনালে এক পথসভায় বক্তব্য রাখবেন। সভা শেষে পেকুয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। পেকুয়ায় এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামে নিহত পেকুয়ার সন্তান শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাড়িতে যাবেন। সেখান থেকে এসে তাঁর বাবা মা’র কবর জেয়ারত করে নিজ বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করবেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে পেকুয়া উপজেলা বিএনপি প্রস্তুতি সভা করে একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, শিলংয়ে ঘোরাঘুরির সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাঁকে আটক করা হয়।
এরপর সালাহউদ্দিনের সহধর্মীনি হাসিনা আহমদ তখন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, তাঁর স্বামীকে মেঘালয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পরিবার বিভিন্ন সময় দাবি করেছে, সালাহউদ্দিনকে ধরে নিয়ে আটকে রেখে একটা পর্যায়ে সীমান্তের ওপারে রেখে আসা হয়।
তবে ভারতের অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই মেঘালয় রাজ্যের নিম্ন আদালতে মামলা হয় সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে ওই মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হন সালাহউদ্দিন।