নিজস্ব প্রতিবেদক
পেকুয়ায় ওয়াকফ স্টেটের মোতোয়াল্লি সূত্রে প্রাপ্ত মোহাম্মদ কবির চৌধুরীর জায়গা ও টইটং বাজারের ২৮টি দোকানঘর গত ১০ বছর ধরে জবর দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। টইটং মৌজার বিএস ৫৩৫ ও ৫৩৬নং খতিয়ানের ৪৮ একর ২৬ শতক জায়গায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদের পিতা বা তার নামে কোন খতিয়ান না থাকলেও ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে ১০ বছর আগে তার বাহিনী দিয়ে এসব জায়গা জবর দখল করে নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময়ের টইটংয়ের আতংকের নাম ছিলো দা বাহিনী। ওই বাহিনী গঠিত হয়েছিল ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বে। বাহিনী তৈরি করে যেখানে নজর দিয়েছেন, সেখানে জমি দখল করে নিয়েছেন তিনি। সে সময় তার গঠিত ওই বাহিনীর কাছে পুরো টইটংয়ের মানুষ জিম্মি ছিলো। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। তাই ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী সে সময় টইটংয়ে একক রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন। কারণ তখন ছিলো বাহিনীর প্রভাব এখন চলছে চেয়ারম্যানের প্রভাব। এখনও দাপটে বেড়াচ্ছে এলাকায়।
জায়গায় খতিয়ান ঘেঁটে দেখা যায়, উপজেলার টইটং মৌজার বিএস ৫৩৫ এবং ৫৩৬নং খতিয়ান। এই দুই খতিয়ানের মোতায়াল্লি সূত্রে অংশীদার রয়েছে দুইটি পক্ষ। একটি মোহাম্মদ কবির চৌধুরী গং এবং অন্যটি মোক্তার আহমদ ছিদ্দিকি গং। এই দুই খতিয়ানে মোট জায়গা রয়েছে ৪৮ একর ২৬ শতক। এর মধ্যে রেকর্ডিয় অংশমূলে কবির আহমদ চৌধুরী পায় ৪৪ একর ১৭ শতক এবং মোক্তার আহমদ ছিদ্দিকি গং পায় ৭ একর ১৫ শতক জায়গা। কিন্তু বর্তমানে মোক্তার আহমদ ছিদ্দিকি গংদের দখলে রয়েছে ২৪ একর জায়গা। অতিরিক্ত ১৬ একর ১৫ শতক জায়গা তাদের পক্ষ নিয়ে জবর দখল করে রেখেছেন ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ও তার বাহিনীরা।
পল্লী চিকিৎসক মিরান উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা মোহাম্মদ কবির চৌধুরী গংদের বর্গাচাষা ছিলেন। তাদের জায়গা জমি চাষাবাদ করতেন। একসময় বাজারের এই দোকানগুলো টিনসেট বেড়ার ছিলো। পরবর্তীতে মোতোয়াল্লি মোহাম্মদ কবির চৌধুরীর অনুমতিক্রমে বিল্ডিং করেছি নিজ খরচে। তবে জায়গায় মালিককে আমি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া দিতাম। কিন্তু বর্তমানে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জায়গা নিয়ে মামলা চলমান আছে বলে আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক প্রতিমাসে ১ হাজার ভাড়া আদায় করছেন।’
মার্কেটের বড় সিমেন্ট ব্যবসায়ী মঈদুর রহমান কাজল। তিনি দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি এই মার্কেটে ব্যবসা করছি প্রায় ১২ বছর হচ্ছে। শুরুতে জায়গার মালিককে ২০০ টাকা ভাড়া দিতাম। গেল ৫ বছর ধরে জাহেদ চেয়ারম্যান ভাড়া নিচ্ছে। তিনি ভাড়া নেওয়ার নামে ডাকাতি শুরু করে দিয়েছেন। শুধু এই দোকান নয় তিনি আমার উপর অমানবিক নির্যাতন করে যাচ্ছে। বাজারে তার মার্কেট নির্মাণ করার সময় আমার কাছ থেকে বাকিতে রড সিমেন্ট নিয়েছিল। বকেয়া টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়। মাঝে মধ্যে বলে দোকানের ভাড়া থেকে বকেয়া টাকা কেটে নেওয়ার কথা বলেন। জায়গার মালিক না হয়ে জোরপূর্বক তিনি এমন অপকর্মে করে যাচ্ছেন।’
৭০ এর কাছাকাছি বসয়ের বৃদ্ধ মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘একসময় এ জায়গায় ছোট নালা ছিলো। পরবর্তী দোকান করা হয়েছে। জায়গার মালিক মোহাম্মদ কবির চৌধুরী। বর্তমানে এই ২৮টি দোকান জবর দখল করে রেখেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।’
স্থানীয় নুরুল আমিন এক কৃষক বলেন, ‘আমি মোহাম্মদ কবির চৌধুরীর কাছ থেকে বর্গা নিয়ে প্রায় ৮ একর জায়গা চাষাবাদ করতাম। এখন মাত্র ১ একর ২০ শতক জায়গা চাষাবাদ করতে পারছি। আর বাকি সব জায়গা ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জোর করে দখল করে নিয়েছে। জায়গা মালিকদের একসময় তার বাহিনীর দ্বারা ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনি এসব জায়গা জবর দখল করে নেন। তিনি যে সব জায়গা জবর দখল করছেন সেখানে তার পরিবারের কারও নামে খতিয়ানও নেই। ক্ষমতার জোরে তিনি মোহাম্মদ কবির চৌধুরী গংদের জায়গা জবর করে রেখেছেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বিরোধীয় জমি ওয়াকপ স্টেটের নয় দাবি করে বলেন, ‘টইটং মৌজার উল্লেখিত বিএস ৫৩৫ ও ৫৩৬নং খতিয়ানের আন্দরে আমার চাচা মোক্তার আহমদ ছিদ্দিকির ওয়ারিশের প্রাপ্ত জমি। ওনাদের নামে কাগজপত্র সৃজিত রয়েছে। বিশ বছর ধরে তারা ভোগ দখলে আছে। এখানে আমি ও আমার পিতার নামে কাগজমূলে কোন জমি নাই। সেখানে অবৈধভাবে জামি ও দোকানঘর দখলে নিয়ে ভোগ করে আসছি কথাটি মিথ্যা।’