পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর রূপান্তর ধারণার চাইতেও দ্রুত ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এমন এক সময় পার করছি যেখানে বহুপাক্ষিকতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি এবং শাসন পদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে’।
গতকাল মঙ্গলবার কাতারের দোহারে একটি হোটেলে ‘আর্থনা’ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজন অনেক বেশি’।
বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, ‘আসুন আমরা সাহসী হই। এমন একটি পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র না হয় যে- সে স্বপ্ন দেখতে না পারে এবং কোনো স্বপ্ন এত বড় না হয় যে- তা অর্জন করা যায় না’।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয় যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু যা আমরা তৈরি করি। এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে একটি করে ভূমিকা রয়েছে’।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের উদ্ভাবন, সহমর্মিতা এবং সম্মিলিত কর্মকান্ডের সক্ষমতাও ব্যাপক’। অধ্যাপক ইউনূস বলেন,কাতার যেভাবে আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেখাচ্ছে কীভাবে একটি দেশ উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ মোকাবিলা করতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস তার মূল বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন।
তার কথায়, ‘বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে- যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি- যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে তুলবে’।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের আহবান জানাই অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য; পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা খুঁজতে- যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক’।
দ্বিতীয়বারের মতো আর্থনা সম্মেলন আয়োজনের জন্য কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের এবং ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এবার সম্মেলন হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’ প্রতিপাদ্যে। এ আয়োজনে কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে।