পূর্বদেশ ডেস্ক
সস্প্রতি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে লোকজনকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, তিনি নিজে যখন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান ছিলেন, তখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আর ভারত এই ধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে ‘উসকানি’ দিচ্ছে বলেও মনে করেন না তিনি।
বাংলাদেশ-ভারত জলসীমার সুরক্ষা বাড়াতে সুন্দরবনের গহীনে গতকাল শনিবার নতুন একটি ভসমান সীমান্ত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র-বিওপি উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
সাতক্ষীরার শ্যমনগর উপজেলাধীন রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের সংযোগস্থলে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ এমন এক সময়ে উদ্বোধন করল বিজিবি, যখন দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় প্রতিদিনিই লোকজনকে সীমান্তের এপারে ঠেলে দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। খবর বিডিনিউজের।
গত রোববার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে বিএসএফ ৭৮ জন ‘বাংলাভাষীকে’ ফেলে যায়, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে কোস্টগার্ড।
সেই মান্দারবাড়িয়া চরের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বিজিবির নতুন এই বিওপি উদ্বোধন করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তার কাছে ভারতের এই ‘পুশ ইনকে উস্কানিমূলক’ মনে হয়নি।
এটা ওরকম উসকানিমূলক মনে হচ্ছে না। যেহেতু এর আগেও উনারা একসময় এটা করেছিল অনেক আগে; যে সময় আমি ডিজি বিজিবি ছিলাম, সেই সময়ে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৬ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত বিজিবির (তৎকালীন বিডিআর) মহাপরিচালক ছিলেন।
বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপালনকালে আবারও ভারত থেকে বাংলা ভাষাভাষি লোকজনকে ঠেলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা তাদের জানিয়েছি- আমাদের বাংলাদেশি যদি কেউ ইন্ডিয়ায় থেকে থাকে, আপনারা প্রপার চ্যানেলে পাঠান। প্রত্যেকটার একটা প্রপার চ্যানেল আছে। যেমন আমারও ইন্ডিয়ান যারা বাংলাদেশে আছে তাদেরও প্রপার চ্যানেলে পাঠাই।
আমরা কিন্তু কাউরে পুশ ইন করি না। এজন্য তাদেরও বলা হইছে, তারা প্রপার চ্যানেলে যদি বাংলাদেশিরা থাকে তাদের পাঠাক।
‘পুশ ইন’ ঠেকাতে ক‚টনৈতিক সমাধানের অংশ হিসেবে ভারতকে চিঠি লেখার কথা জানিয়েছেন উপদেষ্টা। একইসঙ্গে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূত, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে বলে জানান তিনি।
‘পুশ ইনের’ কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শুনছেন যে গুজরাটে একটা কলোনির মতো ছিল বাঙালি কলোনির মতো, বাঙালি বস্তি। ওইটা ওরা ভেঙে দিছে। ভেঙে দেওয়ার পরেই এটা শুরু হইছে।
এরপর থেকে বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ অন্তত ৩৭০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার তথ্য দিয়েছে বিজিবি।
ইউএনএইচসিআরের কার্ডধারীদেরও ‘পুশ ইন’ করার বিষয়ে প্রতিবাদ পাঠানোর কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর ভেতর কিছু রোহিঙ্গাও চলে আসছে। এসব রোহিঙ্গা আবার আমাদের দেশেও ছিল, ওরাও গেছে। আবার যারা ইন্ডিয়ার রোহিঙ্গা, তাদেরও পাঠায়ে দিচ্ছে। এজন্য আমরা এটার প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয় থাকলে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশেও অবৈধ ভারতীয় একেবারেই নাই আমি বলব না, বাট আমি আপনাদের অনুরোধ করব যদি থাকে আমাদের জানান আমরাও যেন প্রপারপথে পাঠায় দিতে পারি। আমরা ওদের মতো অবৈধপথে পাঠাব না, প্রপারভাবে পাঠাব।