পুলিশের তৎপরতা বাড়াতে হবে

3

গত কয়েকদিনে বৃহত্তর চট্টগ্রামে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবনতির কারণ দলীয় আধিপত্য, জুয়ার লেনদেন, ব্যবসায়িক দ্বন্ধ, ভুমি সংক্রান্ত শত্রুতা ও রোহিঙ্গা ক্যাস্পে আধিপত্য ও চাঁদাবাজি ইত্যাদি। এছাড়া জুলাই বিপ্লবের পর থেকে পুলিশের নিস্প্রভ ভূমিকার সুযোগে সাম্প্রদায়িক হামলা, জেলা ও নগরে ডাকাতি, ছিন্তাই ইত্যাদির কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা, ভয় ও শঙ্কা কাজ করছে অর্থাৎ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে প্রায় সবাই তটস্থ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনয়ন পর্যায়ে চলছে রাজনৈতিক আধিপত্যবাদীদের মহড়া। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল (বিএনপি) ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর সাথে বিভিন্ন জায়গায় যে আভ্যন্তরীন দ্ব›দ্ব-সংঘাত চলছে, তাতে পরিস্থিতিকে আরো বেশি অবনতিশীল করে তুলছে। এর সাথে সামাজিক অপরাধও রয়েছে। গতকাল বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একটি ছিল মিরসরাইয়ে বিএনপি ও যুবদলের সংঘাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত হওয়ার ঘটনা, অপরটি ছিল লোহাগাড়ায় অনলাইনে জুয়ার লেনদেন নিয়ে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন। এছাড়া আছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মা মেয়ের লাশ, টেকনাফে অপহরণের ঘটনাসহ একাধিক ছোটবড় প্রতিবেদন।
এছাড়া দেশব্যাপী বিভিন্ন পেশাজীবীদের দাবি দাওয়া, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার ফলে শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধিসহ রাজনৈতিক বিরোধ ও আধিত্যের কথা পত্রিকায় আসছে। যা সামগ্রিকভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধিসহ কঠোর হাতে দমন করতে হবে বিশৃঙ্খলা কারীদের। দেশের মানুষ একটি এক নায়কতান্ত্রিক স্বৈরচারি শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তির আশায় জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল। বিপ্লব সফল হয়েছে, স্বৈরচারি শাসনেরও অবসান হয়েছে, কিন্তু মানুষের মুক্তি আদৌ কি হবে? এ নিয়ে নতুনভাবে প্রশ্ন আসছে সামনে। বিশেষ করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনিতি, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নানা উদ্যোগের কথা শুনে সাধারণ মানুষ চরমভাবে হতাশ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিরাপদে বসবাস করার অধিকার প্রত্যেক মানুষের রয়েছে। মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, মানুষের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে। কাজেই সংকটকালীন অবস্থা থেকে উত্তরণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে মানুষের স্বার্থেই রাষ্ট্রের সব আয়োজন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। শিল্পাঞ্চলে প্রায়ই শ্রমিক বিক্ষোভ, অবরোধ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রপ্তানিমুখী শিল্প উদ্যোক্তারা। তাঁরা সময়মতো তাঁদের পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না। বেশ কিছু ক্ষেত্রে কার্যাদেশ বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে। উদ্বেগের খবর হলো, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরাধীন অবস্থায় একজন ব্যবসায়ীকে মারধর করার ঘটনা। ব্যবসায়ীরা শিল্পাঞ্চল ও পরিবহনে পূর্ণ নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের আরেকটি উদ্বেগের কারণ, ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে হত্যা মামলার আসামি করার ঘটনা। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখতে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগসহ অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু তাই নয়, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতেও বাধা সৃষ্টি হবে।
যতই দিন যাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে বারবার আশ্বাস পাওয়া গেলেও বাস্তবে সহায়তা মিলেছে সামান্যই। শ্রম অসন্তোষের কয়েকটি ঘটনায় মালিকরা সরে আসছেন, তখন একটা স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতকেও যুক্ত হতে হবে। যারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, তারা শ্রমিকদের টার্গেট করছেন। আইনশৃঙ্খলাকে জিরো টলারেন্সে আনতে হবে, অর্থনীতির জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। গত কয়েকদিন আগে মাহমুদ ডেনিমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে বেদম মারধর করা হয়েছে। এই অবস্থা হয়েছে কারণ শ্রমিকরা জানে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেবে না। দেশের স্বার্থে যত দ্রæত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার বিকল্প নেই।