পুলিশকে আইন অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ সরকারকে করে দিতে হবে

2

কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝেনা মানুষ। সব দাঁত যখন হারিয়ে ফেলে তখন বুঝা যায় এ দাঁত কত অমূল্য সম্পদ। আজ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে চরম অবনতি ঘটছে, তাতে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা অনুরণিত হয়েছে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার মুখে। কিছুদিন আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশসহ সহযোগী বাহিনীগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকারুজ্জামান। তিনি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দুর্বল না হয়, সেই দিকে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। দেরি হলেও প্রধান উপদেষ্টা এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে তাদের দেশ গঠন কার্যক্রমে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। যেহেতু পুলিশ বাহিনী দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্মুখভাগের প্রথম এবং প্রধান হাতিয়ার সেহেতু সরকার প্রধান তাদের উৎসাহ দিতে এ জাতীয় উদ্যোগ নিয়ে সময়োপযোগী কাজটি করেছেন। এ ধারা এখানে শেষ করা যাবেনা, এটি অব্যাহত রাখতে হবে। গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে কনফারেন্স হলে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে ১২৭জন পুলিশ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আলোকে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দেশে শান্তি-শৃঙ্খরা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে দেশ গড়া যাবে না। তিনি বলেন, পুলিশই সম্মুখসারির মানুষ। পুলিশ মানে আইন ও শৃঙ্খলা। আর এই আইন ও শৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না। এসময় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার যা কিছুই করতে চাক না কেন, যে ভঙ্গিতেই করতে চাক না কেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তারা করে দেবে না, তারা এনভায়রনমেন্টটা (পরিবেশ) সৃষ্টি করে। ওই এনভায়রনমেন্ট না থাকলে কোনো কাজ হয় না।’ তিনি পুনরুক্তি করে বলেন, পরিবেশ সৃষ্টি করামানে আইনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। আইন যদি না থাকল তাহলে সরকারও কী, গণতন্ত্র কী, অধিকার কী, নাগরিকদের কী, কিছুই থাকে না। এটাই ছিল মূল জিনিস। আমরা পুলিশকে অবহেলা করে, কিংবা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলে তখন বাকি জিনিসগুলো হয়। বীজ লাগানো হয়, চারা লাগানো যায় সবকিছু হয়। আইন না থাকলে ও শৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না।’ এসময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ একটি মস্ত বড় সম্ভাবনাময় দেশ বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘তবে সেই সম্ভাবনাকে আমরা বাস্তবের দিকে আনতে পারছি না, ঠেকে যাচ্ছি। আজকে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, মস্ত বড় সুযোগ। জুলাইয়ের এ অভ্যুত্থানের ফলে সেই সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্ভাবনার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। কারণ হারিয়ে ফেলা সোজা। মুহূর্তে হারিয়ে যায়। এ সম্ভাবনাকে ধরে রাখা। যেটুকু সময় আমাদের আছে, সেটুকু সময়ের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব, ভবিষ্যতে যারা আসবে, তারাও আশা করি চেষ্টা করবে, পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই, এই পথে আমরা এগোলে সম্ভাবনাগুলো বাস্তবে পরিণত হবে।’ তবে যাই করি না কেন, এর জন্য পরিবেশ দরকার যা একমাত্র পুলিশ বাহিনীই সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী এক মস্ত বড় ভূমিকা পালন করে। আইনটা যদি আমরা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে যেকোনো কোনো যুদ্ধ জয় করা সম্ভব। এসময় পুলিশকে অতীতের মত সরকারের অন্যায়ের আজ্ঞাবহ না হয়ে নিজেদের স্বকীয়তা ও মর্যাদা রক্ষা করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের হাত দিয়ে এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে, আমরা তাতে বড় একটা ভূমিকা পালন করব। আমাদের কাছেই আছে আইন এবং শৃঙ্খলা। এটা আমরা প্রতিষ্ঠা করব। পুলিশ হবে বন্ধু। আইন হলো সবার আশ্রয়। পুলিশ হবে সেই আশ্রয়দাতা। সেই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ পুলিশকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ও আশাবাদ দুটিই যথার্থ এবং সাধারণ মানুষের মনের কথা। তবে দেশের মানুষ এও আশা করেন, পতিত সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকার কিংবা ভবিষ্যতে কোন সরকার পুলিশকে প্রতিপক্ষকে দমন ও গায়েল করার কাজে ব্যবহার করবেনা। কোন অন্যায় কাজের সাথে পুলিশ সম্পৃক্ত হবেনা। এ পরিবেশ পুলিশ তখনই সৃষ্টি করতে পারবে যখন সরকার সেই সুযোগ করে দিবে। সরকারের আন্তরিকতা ও ইচ্ছার উপর দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে পুলিশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রতি গভীর দৃষ্টি দিতে হবে।