পূর্বদেশ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের পুরনো চেয়ারম্যানদের সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করে দিয়েছে সরকার। চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি আগের সদস্যদের বাদ দিয়ে ১৪ জন করে নতুন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত একপ্রজ্ঞাপনে নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার এসব জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করেছে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পুনর্গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ দায়িত্ব পালন করবে। আগের পরিষদ বাতিল বলে গণ্য হবে। খভর বিডিনিউজের।
১৯৮৯ সালে গঠন হওয়া জেলা পরিষদ আইনে ৩৩ জন সদস্য নিয়ে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন সময় দলীয় সরকারে মনোনীত সদস্যরাই প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। পরে ২০১৪ সালে আইন সংশোধন করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদ কাঠামো করা হয়। সেখানে জেলার বিভিন্ন জাতিসত্ত্বাভিত্তিক প্রতিনিধিদের নিয়ে পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ১৯ আগস্ট ৬০ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে। এছাড়া মৃত্যুজনিত কারণে নাটোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ তখন শূন্য ছিল।
সবমিলিয়ে খালি থাকা ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বদলে সে সময় প্রশাসক বসানো হয়। এবার বাকি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নতুন চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হল।
রাঙামাটি : সাবেক কৃষি কর্মকর্তা ও রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপুর বড় ভাই কাজল তালুকদারকে চেয়ারম্যান করে এ জেলা পরিষদের ১৫ সদস্যের নতুন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। সদস্যরা হলেন- বাঘাইছড়ি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ দেওয়ান, প্রণতিরঞ্জন খীসা, ইউএনডিপির সাবেক কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক বরুন বিকাশ দেওয়ান, ক্যসিংমং, নাইউ প্রু মারমা, ড্যানিয়েল লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া, সাবেক ইউএনডিপি কর্মী রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা, উন্নয়ন কর্মী সাগরিকা রোয়াজা, নানিয়ারচরের দয়াল দাশ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা হাবীব আজম। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ মুরশীদ, লেকার্স পাবলিক স্কুলের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল বৈশালী চাকমা ও অ্যাডভোকেট লুৎফুন্নেসা বেগম ঝিমি আছেন সদস্যের তালিকায়।
বান্দরবান : বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাপক থানজামা লুসাইকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সকারের আমলেও লুসাই বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
পরিষদের সদস্য পদে রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা, ম্যা ম্যা নু, অ্যাডভোকেট উবাথোয়াই মার্মা, উম চিং মারমা, খাম্মাই ম্রো, মং এ চিং চাক, সানাই গ্লু ত্রিপুরা, লাল জারলম বম, নাং ফ্রা খুমী, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মুহাম্মদ আবুল কালাম, অ্যাডভোকেট মাধবী মার্মা ও খুরশিদা ইসহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে প্রথমবারের মত একজন নারীকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আগের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীকে বাদ দিয়ে সেই পদে আনা হয়েছে জিরুনা ত্রিপুরাকে।
পুনর্গঠিত ১৫ সদস্যের পরিষদের সদস্যরা হলেন- খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বঙ্গমিত্র চাকমা, অনিময় চাকমা, নিটোল মনি চাকমা, মাহবুবুল আলম, শেফালিকা ত্রিপুরা, নিটোল মনি চাকমা, ধনেশ্বর ত্রিপুরা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা, মো. শহিদুল ইসলাম (সুমন), জয়া ত্রিপুরা, অ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা, মহালছড়ি উপজেলার কংজপু মারমা, মানিকছড়ি উপজেলার কুমার সুইচিংপ্রæ সাইন, সাথোয়াই প্রæ চৌধুরী ও পানছড়ি উপজেলার অধ্যাপক আবদুল লতিফ।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæ চৌধুরীসহ বাকিরা পলাতক রয়েছেন।