নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরের ফিসারীঘাট নতুন বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের সুবিধাজনক স্থানে পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ না করার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি আকরাম এইচ চৌধুরী ও কে.এম রাশেদুজ্জামান রাজুর দ্বৈত বেঞ্জ কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ‘ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার’ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে এই নিদের্শনা দিয়েছেন।
জাতীয় মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ দায়ের করা রিট শুনানিতে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দরখাস্তকারীদের তফশিলভুক্ত জায়গা হইতে পুর্নবাসন না করা পর্যন্ত উচ্ছেদ করা যাবে না। আদালত রুল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত পক্ষদ্বয়কে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং ২ মাসের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন বিবাদী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে।
গত ১১ মার্চ ফিসারীঘাটের নতুন মাছ বাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় সংক্ষুব্ধ ‘জাতীয় মৎসজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড’ এর পক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিলো। সেই রিটের বিপরীতে হাইকোর্ট মৎস্য শিল্পের সাথে জড়িতদের পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নেয়া ফিসারীঘাটের পরিত্যক্ত ভূমিতে (৩.৮৭৭৫ একর) ২০১৫ সাল থেকে মাছ বাজার গড়ে তোলা হয়। বিপরীতে বাৎসরিক ৬১ লাখ টাকা ভাড়া পায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত বাজারটি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন জমিটির মালিকানা দাবি করে। এরআগে হাইকোর্ট আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই ভূমির মালিকানা বিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
সোনালী যান্ত্রিক মৎসজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী সওদাগর বলেন, ‘এই নতুন ফিশারীঘাটের মাছ বাজার নিয়ে বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় একশ্রেণীর কুচক্রিমহল দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। আমরা সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছি। নদীর তীর দখল করে মাছ বাজার গড়ে তোলা হয়নি, বরং কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং থেকে সৃষ্ট পরিত্যক্ত জায়গায় অত্যাধুনিক ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার গড়ে উঠেছে।’
দীর্ঘদিন থেকে নতুন ফিসারীঘাটে ব্যবসা করে আসছেন মহেশখালীর বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, মৎস্য একটি বড় সেক্টর। ফিসারীঘাট মাছ বাজার থেকে রপ্তানি মাছ খাত থেকে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে লক্ষাধিক মৎসজীবি এ খাতে কাজ করেন। বাৎসরিক চল্লিশ হাজার ফিশিং বোট এই বাজারে মাছ বিক্রির জন্য ভীড়ে।
এর আগে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছিলো, ফিসারীঘাট মাছ বাজারের মৎস্যজীবিদের পুনর্বাসন না করে নতুন মাছ বাজার উচ্ছেদ করা অমানবিক হবে।
নথি অনুযায়ী, ২০১৫ সালে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মধ্যবর্তী ৩.৯৭৭৫ একর জায়গায় গড়ে ওঠা বস্তি উচ্ছেদ করে মাছ বাজার গড়ে তোলা হয়েছিল। ফিশারিঘাটের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারে ১০৩টি গদি (আড়ত) আছে। সেখানে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী এবং পাঁচ হাজার কর্মচারী আছে। আরো লক্ষাধিক মৎসজীবি ফিসারীঘাটের এই মাছ বাজারের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
হাইকোর্টে নতুন ফিসারীঘাটের মাছ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের নির্দেশনা আসার পর স্বস্তি ফিরেছে সোনালী যান্ত্রিক মৎসজীবি সমবায় সমিতির সদস্যদের মাঝে।